বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার, জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এম খায়রুজ্জামানকে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়ার সরকারই সেদেশের আদালতে আইনি লড়াই করবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
Published : 15 Feb 2022, 06:10 PM
খায়রুজ্জামানকে ফেরত পাঠানোর ওপর কুয়ালা লামপুর হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব দেশের সরকার সে দেশের আদালতকে সম্মান করে; বাংলাদেশও সেই মানসিকতা ধারণ করে।
”এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারই এটাতে ফাইট করবে। এই কেইসে মালয়েশিয়া সরকারের সাকসেসফুলি উইন করার জন্য যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই সেটা করবে।”
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসা অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চার দলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে থাকা সাবেক এই কূটনীতিককে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ।
পরদিন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানায়, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ওইদিন সাংবাদিকদের বলেন, অভিবাসন আইন ভাঙায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কোনো প্রবাসীর এমন অপরাধ পেলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে, যাতে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।
এদিকে খায়রুজ্জামান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ঠেকাতে তৎপর হন তার স্ত্রী রিটা রহমান। তার পক্ষে আইনজীবী আবতার সিংহ ঢালিওয়াল মালয়েশিয়া সরকারকে উকিল নোটিস পাঠান। তাতে সাড়া না পেয়ে তারা আবেদন করেন কুয়ালা লামপুরের হাই কোর্টে।
রিটা রহমানের দাবি, কোনো ‘অন্যায় না করলেও ‘তার স্বামীকে মালয়েশিয়ায় ‘খামোখা’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই আবেদনের শুনানি করে কুয়ালা লামপুর হাই কোর্ট মঙ্গলবার খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
”তবে, সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারই কিন্তু এটাকে ডিফেন্স করবেন। কারণ এটি তাদের সিদ্ধান্ত- গ্রেপ্তার এবং বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা মালয়েশিয়া সরকারের। সেখানে আমরা রিকোয়েস্ট করে থাকি বা তদবির করে থাকি, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।”
জেল হত্যা মামলায় খায়রুজ্জামানের নাম থাকলেও পরে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছিল। তাকে দেশে আনা গেলে ওই মামলায় পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের ইঙ্গিত গত সপ্তাহে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেছিলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, মামলাটি কোন পর্যায় থেকে, হয়ত বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অথবা আবার মামলাটি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বা পরবর্তীতে পদক্ষেপ কী হবে।”
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
এরপর ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে। ২০০৪ সালে পলাতক তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হলেও খায়রুজ্জামানসহ ছয়জন খালাস পান।
বিচারিক আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া তিনজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৮ সালে হাই কোর্ট রায় দেয়, বাকি দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের রায়ে তিনজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে পলাতক থাকায় তাদের কারও সাজা কার্যকর করা যায়নি।
পুরনো খবর