বাংলাদেশের অনুরোধেই সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়ার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর দিয়েছে দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম।
Published : 10 Feb 2022, 12:06 PM
এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসা খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চার দলীয় জোট সরকারের সময় কূটনেতিক দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী কার্ড নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান।
বুধবার মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে বলে খবর এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনও বৃহস্পতিবার খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে খবর দিয়েছে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার।
হামজা জাইনুদিন বলেছেন, “নিয়ম মেনেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” আর গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, “তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ মিশনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান সেই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন, তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে বিদেশে পাঠায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ফিরলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পরপরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পরের বছর একটি আদালত জেল হত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।