দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলার ঘটনার ‘বিচার না হওয়ায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
Published : 11 Feb 2022, 06:41 PM
শুক্রবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, জমি জবর দখল ও প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমাদের সঙ্গে কেউ আর প্রতারণা করবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আমাদের এই আস্থায় প্রশাসনে, মন্ত্রী পরিষদে যারা আছেন, আপনারা চক্রান্তমূলকভাবে এমন কোনো ভূমিকা পালন করবেন না, যাতে এদেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায় ভাবে যে, তারা প্রতারিত হয়ে গেছে, আর এই সুযোগটা গ্রহণ করছে ওই সাম্প্রদায়িক মহল বিশেষ।”
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন অতি দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, সেই থেকে শুরু করে চার মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, এজহারভুক্ত আসামীদের শতকরা ৫ ভাগও গ্রেপ্তার হয় নাই।”
গত অক্টোবরে দুর্গা পূজার সময় অষ্টমির দিনে এবং এরপরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বিচারও হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, বলা হয়েছিল ৯০ দিনের মধ্যে তাদের বিচার করা হবে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, এখন তাদের ৯০ দিন হয়ে গেছে। আইনের বিধান মতে ১২০ দিন পর এসমস্ত আসামিরা জামিনের আবেদন করতে পারবে। তাদের জামিন দেওয়ার অধিকার আদালতে রয়েছে।
“এখনও আভিযোগপত্র হল না, আসামীরা গ্রেপ্তার হল না। বরং যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখন তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার সময়।”
ক্ষমতাসীন দলের লোকদের যোগসাজসে এসব হামলা হচ্ছে উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যারা সরকারের ভেতরে আছে, বাইরে আছে, যুগপৎভাবে এই হামলাগুলো তারা পরিচালনা করছে। আপনারা লক্ষ্য করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায় ২৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের হল।
“সেখানে মন্ত্রীর ভাইপো আছে, আওয়ামী লীগের নেতা আছে, বিএনপির নেতা আছে। আমরা বলতে চাই, একসঙ্গে যোগসাজসভাবে এই কর্মকাণ্ডগুলো আজও অব্যাহত রাখা হয়েছে।”
হামলার বিচার না হলে ‘বৃহত্তর আন্দোলন’ এর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করেন এ মানববন্ধনের বাইরে আমরা যেতে পারব না। আপনারা ভুল করবেন।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, দুর্গা পূজায় হামলার ঘটনার পর যেহেতু বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ হয়েছিল, আমরা ভেবেছিলাম ওই ঘটনার পর আর কেউ এ ধরনের সাহস করবে না। কিন্তু এরপর বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত আছে। এ সরস্বতী পূজায়ও হামলা হলো।
“সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনও তৎপর রয়েছে। এর কারণ বিচার না হওয়া। তাই আমরা বলছি, প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে.এল ভৌমিক সাম্প্রদায়িকতা রুখতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংগঠনের সহসভাপতি তাপস কুমার পাল ও মনিন্দ্র নাথ, রমনা কালি মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহাসহ পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।