জটিল এক সময়ে বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের প্রধানের পদ পেয়েছিলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, চার বছর সেই দায়িত্ব পালনের পর গেলেন অবসরে।
Published : 30 Dec 2021, 05:41 PM
অবসর জীবনটি নিভৃতে কাটাতে চাইছেন বলে জানালেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এক সময় সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও অবসর জীবনে গণমাধ্যমকে এড়িয়েই থাকতে চান তিনি।
বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে নজিরবিহীন এক ঘটনার পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব থেকে বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা ৬৭ বছর পর্যন্ত পদে থাকতে পারেন। বয়সের সেই সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার অবসর নিলেন তিনি।
শেষ কর্মদিবসে সুপ্রিম কোর্টে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার উদ্বোধন করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সেই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে নিরাশ করেননি তিনি।
প্রথমেই বিচারপতিদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কর্নার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জ্ঞান থাকা দরকার। অনেক জাজমেন্টের মধ্যে হয়ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয় লিখতে হবে। সুতরাং এ লাইব্রেরি উনাদের জাজমেন্ট লেখার জন্যে সহায়ক হবে। কারণ, এখানে এমন সব বই রাখা হয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো জাজমেন্ট যখন হবে তখন একজস্টিভলি লিখতে পারবেন।”
অবসর কীভাবে কাটাবেন- এই প্রশ্নে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সহাস্যে বলেন, “অবসরজীবন একদম সেক্লুডেড কাটাবো। একা একা।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে বেশ আমুদে কণ্ঠে তিনি বলেন, “শোনেন, আমার কাজ শেষ। আমি এখন অবসর জীবনযাপন করব। আমি কিন্তু আগে সাংবাদিকতাও করেছি। এখন আমি একদম ফুল ইয়েতে যাব। আপনার কেউ যদি আমার সাক্ষাৎকার নিতে যান, আমি দেব না। এটা কিন্তু আগেই বলে দিয়েছি।”
প্রধান বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ঝড় উঠেছিল বিচারাঙ্গন নিয়ে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে এজলাসে বসতে অনীহার কথা যেসব সহকর্মীরা জানিয়েছিলেন, তার মধ্যে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও ছিলেন। ওই সময়ের নানা ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।
আবার সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময়ই বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কোর্টের যাত্রা শুরু হয়, সেটাও ইতিহাসের অংশ।
গণমাধ্যমের কারণে নিজের ঘুম হারাম হওয়ার কথাও রসিকতাচ্ছলে বলেন প্রধান বিচারপতি।
“আপনারা আমার সময়ে এত বেশি লিখেছেন যে আমি অনেক রাতে ঘুমাইনি। একথা বলে গেলাম। কারণ, আমি মনে করেছি যে, আপনারা আমাকে আপন মনে করে হয়ত একটু বেশি লিখেছেন। তো এটাতে আমি মাইন্ড করিনি।
“আমার সাংবাদিকতার কার্ড ছিল, আমি সাংবাদিকদের অবশ্যই মিস করব।”
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। ওই দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০০১ সালে হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। দুই বছর পর স্থায়ী হন। ২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। তার ১০ বছর পর অবসরে গেলেন তিনি।
শুক্রবার সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের জন্মদিন বলে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।