মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য নৌ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 20 Dec 2021, 11:58 AM
সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ‘মিডশিপম্যান ২০১৯ আলফা’ এবং ‘ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২১ ব্রাভো’ ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ তোমাদের চমৎকার কুচকাওয়াজ উপভোগ করতে পেরে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোমরা তোমাদের অদম্য আগ্রহ, দৃঢ় মনোবল ও সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছ। আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনের যে কোনো সঙ্কটে তোমরা এ ধরনের সুবিবেচনা ও নেতৃত্বের গুণাবলীর পরিচয় দেবে।”
এই প্রশিক্ষণ শেষে ৪৪ জন কর্মকর্তা বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কমিশন পেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।
তাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, “কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তোমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।”
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তোমাদের মনে রাখতে হবে, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে, তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। আমি আশা করব, তোমাদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা তোমাদের অধিনস্তদেরও একইভাবে দেশের প্রয়োজনে আত্মনিবেদনে অনুপ্রাণিত করবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের সুযোগ্য সন্তানেরা আজ দেশমাতৃকার সেবায় জীবনপণ শপথ নিয়ে নৌ বাহিনীতে অফিসার পদে কমিশন পেয়েছে। এই সাফল্যের গৌরবময় অংশীদার আপনারাও। তাই আপনাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
“বিশেষ করে আমাদের মেয়ে সদস্যরাও আজকে যথেষ্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। আপনারা দোয়া করবেন যেন, আপনাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের এক একজন গর্বিত সন্তানে পরিণত হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিবেদন করতে পারে “
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ‘নিরলসভাবে’ কাজ করে যাচ্ছে।
“দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে।
“ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইতোমধ্যে একাডেমিতে স্মল আর্মস ফায়ারিং, মোটর ড্রাইভিং এবং ব্রিজ সিমুলেটর স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই বর্ধিত সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তারা অধিকতর আত্মবিশ্বাসী হয়ে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে নৌ বাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
এই অনুষ্ঠানে আট জনকে ডাইরেক্ট এন্ট্রি এবং ৩৬ জনকে মিডশিপম্যান অফিসার হিসেবে কমিশন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল কুচকাওয়াজে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী অফিসারদের হাতে পদক তুলে দেন।
কমিশন পাওয়া অফিসারদের মধ্যে মিডশিপম্যান ২০১৯/এ ব্যাচের মো. মোহতাসিম সিফাত সেরা চৌকশ মিডশিপম্যান হিসেবে 'সোর্ড অব অনার' পান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জন করা আলিফ আব্দুল্লাহ ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২১/বি ব্যাচ থেকে অ্যক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মো. আব্দুল মমিন শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন’ স্বর্ণ পদক পান।
নৌ বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ সকলক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়েছে।”
মহামারীর সময়ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।