তিন দিন আগে তুরাগ থানার দিয়াবাড়ির ঝাউবন থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে নেমে তাকে গুলশানের নিকেতনের এক বাসার গৃহকর্মী পারভীন ফেন্সি (৩০) হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
Published : 05 Dec 2021, 07:18 PM
এই ঘটনায় গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হাসান (৬৩) ও তার স্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসানকে (৬০) গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, গৃহকর্তার সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক আছে সন্দেহ থেকে গৃহকর্ত্রী সামিনা ফেন্সিকে হত্যা করেন।
তবে লাশ গুম করার কাজে তাকে তার স্বামী ও তার গাড়িচালক রমজান আলীর (৪১) সহযোগিতা নেন।
পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি দেড় বছর ধরে গুলশান-১ এর নিকেতনের ৬ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী ছিলেন। শনিবার রাতে ওই বাসা থেকে গৃহকর্তা জসীমুল ও সামিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে ঝগড়াঝাটির সময় সামিনা ‘লাঠি দিয়ে ফেন্সিকে আঘাত করলে’ তিনি জ্ঞান হারান এবং সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তখন গৃহকর্তা জসীমুল ঘরে ছিলেন না। কিন্তু পরে জসীমুল গাড়িচালক রমজান আলীকে (৪১) ফেন্সির মৃতদেহ নিজের প্রাইভেটকারে করে ওই ঝাউবনে ফেলে চলে আসে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদ্ন্ত শেষে রোববার পারভীন ফেন্সির লাশ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের আলোকডিহির সরকার পাড়ায় তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
পিবিআই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, ফেন্সির মৃতদেহ উদ্ধারের পর যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাই জসীমুল ও সামিনা ফ্ল্যাটেই ছিলেন, আত্মগোপনে যাননি।
হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সামিনা সন্দেহ করত যে তার স্বামীর সঙ্গে ফেন্সির অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তা নিয়ে প্রায়ই তাকে মারধর করত।”
ফেন্সির স্বামী মোমিনুল ঢাকায় রিকশা চালালেও ওই বাসায় কাজ নেওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে মাত্র একদিন তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জাহাঙ্গীর জানান, ফেন্সিকে মারধর করার অভিযোগে কয়েক মাস আগে তার স্বামী মোমিনুল গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তের সময় ‘মারধর করা হয় না’ ফেন্সিকে দিয়ে বলিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে গৃহকর্তা ও গৃহকর্মী জানান।
তিনি বলেন, ফেন্সির সঙ্গে দেখা করতে না দিলেও মোমিনুলকে প্রতি মাসে একহাজার টাকা করে পাঠাত জসীমুল। ফেন্সির একমাত্র সন্তান গ্রামের বাড়িতে তার দাদির সঙ্গে থাকত।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, জসীমুল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুই মেয়ে ও গৃহিনী স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ওই ফ্ল্যাটেই থাকতেন।
“লাঠির আঘাতে গৃহকর্মী ফেন্সিকে হত্যা এবং তার মৃতদেহ গুম করার বিষয়টি দুই মেয়ে বাসায় থাকলেও জানত না।”
এই ঘটনায় ফেন্সির স্বামী মোমিনুল তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গাড়িচালক রমজানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।