মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড নিয়ে হাই কোর্টের রায় পিছিয়েছে।
Published : 25 Nov 2021, 01:17 PM
ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর জানুয়ারিতে এ রায় ঘোষণা করা হবে বলে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেয়।
পরীমনিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানোর বিষয়ে ঢাকার দুই মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের ব্যাখ্য চেয়েছিল হাই কোর্ট। দ্বিতীয়বারের তলবে তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চান হাই কোর্টের কাছে।
এ নিয়ে সব পক্ষের শুনানির শেষে গত ৩১ অক্টোবর হাই কোর্ট রায়ের জন্য ২৫ নভেম্বর দিন রেখেছিল।
সে ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মামলাটি রায়ের জন্য উঠলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম সব পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, “আমরা সবগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি এখন পর্যন্ত। একটু সময় নেব আমরা। জানুয়ারিতে রায় হবে অবকাশের পর।”’
গত ৪ অগাস্ট চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় তাকে তিন দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এরপর তার জামিন আবেদনের শুনানি করতে অস্বাভাবিক বিলম্ব নিয়ে হাই কোর্ট প্রশ্ন তুললে হাকিম আদালত থেকে জামিন পান পরীমনি। প্রায় এক মাস কারাগারে থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান।
বনানী থানার মাদকের মামলায় পরীমনিকে দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস। পরে একই মামলায় মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় আরও এক দিনের রিমান্ড দেন।
কী কী তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরীমনিকে শেষ দুই দফা রিমান্ডে পাঠানো হয়েছিল, দুই হাকিমের কাছে সে ব্যাখ্যাই জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট।
জামিন সংক্রান্ত রুল ও রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির এক আবেদনের শুনানিতে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ গত ২ সেপ্টেম্বর সেই আদেশ দেয়। দুই হাকিমকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
সেই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার নথিসহ (কেস ডকেট) আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পরীমনিকে শেষ দুই দফা রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
নির্দেশ অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার নথি নিয়ে হাজির হন। মার্জনা চেয়ে দুই মহানগর হাকিমের জমা দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যাও সেদিন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
কিন্তু দুই হাকিমের ব্যাখ্যায় উষ্মা প্রকাশ করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম সেদিন বলেন, “রিমান্ড নিয়ে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের যে গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইন আছে, তারা এগুলোর বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা তাদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট নই। যে কারণে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখলাম।”
পরে ২৯ সেপ্টেম্বর দুই মহানগর হাকিমের আইনজীবী আব্দুল আলিম মিয়া জুয়েল আদালতকে বলেন, “আপনারা গত ২ সেপ্টেম্বর আমাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিলেন। আমরা সেই ব্যাখ্যা রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে আপনাদের কাছে দাখিল করেছি। আপনার হস্তগত হয়েছে। কি কারণে দিয়েছি সে কারণগুলো বলেছি।”
এ সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, “দুজনই আমার কাছে এসেছিলেন, দুজনই ইয়াং অফিসার। দুজনই অনুতপ্ত, দুঃখিত। ট্রেনিংয়ের অভাবে প্রপারলি রিপ্লাইটা (ব্যাখ্যা) লেখা হয় নাই। উনারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন আপনাদের কাছে।”
বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম তখন বলেছিলেন, “ঠিক আছে, আরেকটা রিপ্লাই দিক। আমরা সময় দিই। আগামী ২৪ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য রাখছি।”
এরপর গত ২৪ অক্টোবর ব্যাখ্যা দিতে আরও এক সপ্তাহের সময় নিয়ে শেষমেশ ৩১ অক্টোবর নিঃশর্ত ক্ষমা চান দুই মহানগর হাকিম।
তারা বলেন, ভবিষ্যতে রিমান্ড মঞ্জুর বা খারিজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন, রিমান্ড মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দশনা অনুসরণ করবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর হবে না।
বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম সেদিন বলেছিলেন, এ বিষয়ে রায়ের সঙ্গে জামিন সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও করে দেওয়া হবে।