পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে দেড় বছর পর প্রথম কোনো পাবলিক পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 13 Nov 2021, 12:20 AM
কোভিড মহামারী পরিস্থিতিতে দীর্ঘ বিরতির পর রোববার শুরু হতে যাওয়া এই এসএসসির পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিয়ে এবার বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্রগুলো।
একই সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য পরীক্ষার আগে ও চলাকালে করণীয় নিয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষা দিতে বসবেন ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন শিক্ষার্থী; বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৯ হাজার ৩৫টি। সারা দেশে মোট ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পরীক্ষার সব ধরনের প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুই জন করে বসানো হবে এ স্কুল কেন্দ্রে।
“আমরা করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করিয়ে এবং তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করাব। কারো শরীরের তাপমাত্রা বেশি আসলে এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা রুমে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করব, সেজন্য আইসোলেশন রুমও প্রস্তুত রয়েছে।”
ঢাকার কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কেন্দ্রে হাত জীবাণুমুক্ত করা ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুমও। কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধু তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে দেড় ঘন্টায়।
দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগেই মাধ্যমিকের পরীক্ষা শেষ হয়।
তবে কোভিডের কারণে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার নয় মাস পিছিয়ে এ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
পরীক্ষা নিতে শুরু থেকেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ থাকলেও সংক্রমণ কমার পরই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে আসছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা না নিয়ে ‘অটোপাস’ দেওয়ার পরিকল্পনাও শুরু থেকে এড়িয়ে গেছে মন্ত্রণালয়।
গত সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজে সরাসরি ক্লাস শুরুর পর এমন সময়ে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, যখন দেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্তের হার দেড় শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সংক্রমণও অনেক নিম্নমুখী।
তবে এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবে সংক্রমিত না হয় সেভাবে কেন্দ্র প্রস্তুত করার কথা বলছে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
এরই মধ্যে পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ফাইল ছবি
তিনি বলেন, “অনেক সময় কেন্দ্রের সামনে অনেক ভিড় হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য অসুবিধা হয়ে যায়, সে কারণে আমরা মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও রাখব। যাতে আমাদের নির্দেশনা তারা মানেন।”
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা হক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা এক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসাবেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা পরীক্ষা নেব। মাস্ক পরে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করবে, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও থাকবে, শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হবে।
“কেউ অসুস্থ থাকলে সে চাইলে বেডে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সেসব প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।”
এবার শুধু তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে; যা শুরু হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞান দিয়ে। সময়ও থাকবে তিন ঘণ্টার বদলে দেড় ঘন্টা।
রোববার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা হওয়ার পরদিন সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা এবং বিকালে হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষা হবে।
১৬ নভেম্বর সকালে রসায়ন (তত্ত্বীয়), ১৮ নভেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়), ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকালে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলেরভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
মানতে হবে যেসব নিয়ম
পরীক্ষা যথাযথভাবে অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষার্থী ও দায়িত্বশীলদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
>> পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে।
>> ‘অনিবার্য কারণে’ কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরেও হলে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ একটি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
>> ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সকল সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
>> ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিটি আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে।
>> কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে ‘ছবি তোলা যায় না’- এমন ফোনই তিনি ব্যবহার করবেন।
>> পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
>> সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
>> দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্ৰুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবে।
>> প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
>> ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে এনসিটিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পাঠাবে।
প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক খাতার (নোটবুক) নম্বর ২৮ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক খাতার নম্বরের সাথে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনলাইনে পাঠাবে।
>> পরীক্ষার্থী উত্তরপত্রের ওএমআর ফরমে তার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করবে। কোনো অবস্থাতেই উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না।
>> প্রত্যেক পরীক্ষার্থী শুধু রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্রে উল্লেখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই ভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
>> পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।
>> সৃজনশীল বা রচনামূলক (তত্ত্বীয়) ও বহুনির্বাচনি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য একই উপস্থিতিপত্র ব্যবহার করতে হবে।
>> ফল প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করা যাবে।