পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে আদালতের আদেশে শেলটার হোমে যাওয়া যশোরের প্রাপ্তবয়স্ক এক তরুণী নিজ হেফাজতে থাকার অনুমতি পেলেন।
Published : 07 Sep 2021, 06:59 PM
যশোরের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদেশের বিরুদ্ধে তরুণীর আপিল মঞ্জুর করে মঙ্গলবার এ আদেশ দেয় বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে এ তরুণীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের আদেশের ফলে এখন সে নিজ জিম্মায় থাকার সুযোগ পেল।”
নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের এই আদেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এই আইনজীবী।
নুহিয়া আহমেদ বলেন, “কোনো নারী স্বাবলম্বী হতে চাইলে সমাজের প্রতিটি স্তরে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। আইনি প্রতিকার থাকলেও অনেকে তা জানেন না বা জেনেও সাহস করেন না। এ তরুণীর ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে উচ্চ আদালত, তা অনেক নারীকে সাহস জোগাবে।
“তাছাড়া আইনি প্রক্রিয়ায় নারীদের অধিকার নিশ্চিত হলে নারীর ক্ষমতায়ন আরও সুদৃঢ় হবে।”
যশোরের ভেকুটিয়ার বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা এ তরুণীর জন্ম ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তার বাবা বিদেশে থাকেন, মা গৃহিনী।
পরিবার জোর করে বিয়ে দিতে চাওয়ায় চলতি বছর ২০ জানুয়ারি পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এ তরুণী। বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন।
মাসহ স্বজনরা বাড়ি ফিরে যেতে ‘ভয়ভীতি’ দেখাচ্ছে জানিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি।
মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে তার মা গত ২৩ মে যশোরের আদালতে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে চারজনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন।
এতে অভিযোগ করা হয়, তার ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে চার আসামির একজন দেশের বাইরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ফুসলাতেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তার মেয়েকে আটক করে যৌন নিপীড়ন করছে।
যশোরের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল নালিশি আবেদনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তরুণীকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে।
পরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তিনি গত ২৩ জুন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। মায়ের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় তিনি পালিয়ে এসেছেন। মানবপাচার সংক্রান্ত কোনো প্ররোচনার শিকারও তিনি নন।
মা মেয়েটিকে তার হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করলেও পরিবারের অধীনে নিজের নিরাপত্তার শঙ্কার কথা জানিয়ে এই তরুণী নিজ হেফাজতে থাকার আবেদন করেন।
পরে ট্রাইব্যুনাল ওই তরুণীকে যশোরের ভেকুটিয়ায় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের শেলটার হোমে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়।
শেলটার হোমে থেকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন তরুণী।
হাই কোর্ট গত ২ সেপ্টেম্বর তার বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার আদেশ দিল।
এর মধ্যে এই তরুণীকে যশোর শেলটার হোম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।