বাড়ির ছাদে হেলে পড়া বিদুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে গত বছর অঙ্গ হারানো এক শিশুর ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
Published : 22 Aug 2021, 07:54 PM
শিশুটিকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে শিশুটির বাবার করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল দেয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান, পটিয়ায় পল্লী বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ ৬ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শামছুল ইসলাম শিমুল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আইনজীবী মো. শামছুল ইসলাম শিমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুটির ডান হাত, বাঁ পা ও পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে। দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির উন্নত চিকিৎসা করাতে বলেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শিশুটির পরিবার প্রায় সর্বস্বান্ত।
“পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে এর দায় কোনোভাবেই পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। কিন্তু নোটিস পাঠিয়েও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছে। আদালত রুল জারি করেছে।”
চট্টগ্রামে বাঁশখালীর কাথুরিয়া গ্রামে মো. ইব্রাহীমের বাড়ির পাশে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি হঠাৎ হেলে পড়ায় বৈদুতিক তার বাড়ির ছাদে এসে পড়ে।
ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে হেলে পড়া খুঁটি সরাতে বাঁশখালীতে পল্লী বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন মো. ইব্রাহীম।
তাতে কাজ না হওয়ায় গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে আবেদন করেন তিনি। তারপরও খুঁটি ও ঝুলে পড়া তার সারায়নি পল্লী বিদ্যুত।
গত বছর ৪ মার্চ মো. ইব্রাহীমের ছয় বছর বয়সী ছেলে ঘরে মাকে না পেয়ে ছাদে ওঠে। সেখানেই সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।
পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওইদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তার ডান হাত, বাঁ পা ও পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতে হয়।
এরপর ঝুঁকিমুক্ত হলে গত বছর ১০ মে শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি নিয়ে যায় তার পরিবার। এখনও তার চিকিৎসা চলছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাড়ি ফেরার পর শিশুটির বাবা মো. ইব্রাহীম চিকিৎসা ও ক্ষতিপূণ চেয়ে বিভিন্ন সময় চিঠি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ২৫ জুন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে পটিয়ায় পল্লী বিদ্যুৎতের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আবেদন করেন তিনি। সাড়া না পেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে গত ১৩ জুলাই উকিল নোটিস পাঠানো হয়। সে নোটিসে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
বিবাদীরা নোটিসে সাড়া না দেওয়ায় বৃস্পতিবার ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মো. ইব্রাহীম। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার রুল দিল উচ্চ আদালত।