বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলার পর এবার তাকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
Published : 20 Aug 2021, 02:25 AM
বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশনের এক জরুরি সভার পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“সভায় বরিশাল সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবেলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”
বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
ওই ঘটনায় ‘মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে’ পথরোধ করে সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং ‘হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত ও গুলিবর্ষণের’ অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক। আরেকটি মামলা করেন ইউএনও মুনিবুর রহমান।
দুই মামলায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বরিশালের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসার কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্থা হয়েছেন। তার বাসায় হামলা করা হয় যেখানে তার করোনা আক্রান্ত অসুস্থ পিতামাতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই উক্ত কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে, তার বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে, তার চামড়া তুলে নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে শ্লোগান দিয়ে মিছিল করা হয়েছে।
“মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।”
ক্ষমতাসীন দলের এই মেয়রের সমালোচনা করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।”
এতে আরও বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অত্যন্ত আস্থাবান এবং তার লালিত দেশপ্রেমের চেতনা ধারণ করে কাজ করছে।
“আমরা দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকব, সেই সঙ্গে এইসব রাজনৈতিক দুর্বত্তকে আমরা আইনের মাধ্যমেই মোকাবেলা করব। আইনের শাসনের মাধ্যমে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর যে অভিপ্রায়, সে ব্যাপারে সকলেই অঙ্গীকারবদ্ধ এবং কোন পরিস্থিতিতেই তারা সেই পথ থেকে বিচ্যুত হবে না।”
এদিকে ইউএনও বাসায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বুধবার রাতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বরিশালকে অশান্ত করতে ইউএনও ‘অপতৎপরতা’ চালাচ্ছেন অভিযোগ করে মুনিবুর রহমানের অপসারণ দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে বরিশালের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে কার ভূমিকা কী ছিল? কেউ যদি ভুলভ্রান্তি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”