লকডাউন শেষে অফিস-দোকানপাট খুলে গেছে, রাস্তায় নেমেছে গণপরিবহন; মানুষের ব্যস্ততা আর গাড়ির চাপে রাজধানীতে ফিরেছে চিরচেনা যানজট আর কোলাহল, শুরু হয়েছে ট্রেন এবং লঞ্চ চলাচলও।
Published : 11 Aug 2021, 02:57 PM
বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী ওভারব্রিজের নীচে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় অর্ধশতাধিক মানুষকে।
কিন্তু পরপর ৮ নম্বর রুটের দুটি বাস এলেও কোনো গাড়িরই দরজা খোলা হয়নি। সাইফুল ইসলাম যাবেন পল্টনের একটি কার্যালয়ে। ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কোনো বাসে উঠতে পারেননি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাইফুল বলেন, “এক ডাক্তারের প্রাইভেট কার চালাই। গাড়ির মালিক ১০০ টাকা দিয়েছেন পল্টন যাতায়াতের জন্য। বাস না পেলেতো এই টাকায় যাওয়া সম্ভব না।”
রাস্তায় যাত্রীর চাপ বাড়লেও লকডাউনে শুরু হওয়া ভাড়ার মোটরসাইকেল চালকদের লম্বা হাঁক এখনো কমেনি। এতদিন ‘ভিআইপি’ সড়কগুলোতে রিকশা চললেও বুধবার সকাল থেকে সেসব সড়কে রিকশা আটকে জরিমানা করেছে পুলিশ।
খুলেছে সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানসহ বিপণি বিতানগুলোও। তবে বুধবারের সকালটা দোকান আর বিপণি বিতানের কর্মীদের ধোয়া মোছায় বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।
খুশবু বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার সাইফুল বলেন, “সবকিছু খোলা। হোটেলে লোক বসিয়ে খাওয়াতেও বাধা নেই। এখানে স্টুডেন্ট আসে বেশি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ইনকামও বাড়বে।”
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার আল আমিন রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, “এতদিন পার্সেল বিক্রি করেছি। আজ থেকে কাস্টমার বসে খাচ্ছে। মাস্ক না থাকলে ঢুকতে মানা করছি। তবে অনেকেই মাস্ক পরছেন না।”
আদাবরের জিনিয়া স্টোরের মালিক আমান উল্লাহ বলেন, “এতদিন হাফ শাটারে দোকান চালিয়েছি ,এখন পুরো খোলা। তবে মানুষ মানে না। অনেকই মাস্ক ছাড়া ঢুকছে। নিজের ভালো না বুঝলে কীভাবে হবে?”
লঞ্চ চলাচল শুরু
১৯ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাট থেকে। বুধবার ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে এমভি ইমাম-হাসান লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর এমভি সোনারতরী, গ্রিন লাইন সদরঘাট ত্যাগ করে।
চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী-২ ও রফরফ-৭ লঞ্চে যাত্রীর চাপ ছিল বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক মোহাম্মদ নেওয়াজ।
সদরঘাট থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরিশাল ও মুলাদী রুটের লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যায় বরিশালসহ আন্যান্য দূরের পথের লঞ্চগুলো ছাড়ার কথা রয়েছে।
ভরা যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন
কঠোর বিধিনিষেধ শেষে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ফের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী সকাল থেকে ছেড়ে গেছে।
তবে ঢাকা থেকে একতা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস এবং টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোবরা থেকে বুধবার ছাড়ছে না।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হলে অন্যসব যাত্রীবাহী গণপরিবহনের মত ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।
ঈদ ঘিরে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই লকডাউন শিথিল করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ও ট্রেন চালু করে। এরপর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর লকডাউন শুরু হলে ট্রেনও থেমে যায়।
সেই বিধিনিষেধের সময়সীমা ১০ অগাস্ট শেষ হয়। বুধবার থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার।
লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রথমদিন দেশের ভেতরে আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই বলে জানিয়েছে দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে আজকে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। আগের মতই তারা চলাচল করছে।”
নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা আশা করছি সামনে যে টানা তিন দিন ছুটি রয়েছে তারপর হয়ত চাপ বাড়বে।”