করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ আগামী ১১ অগাস্ট থেকে ‘ধাপে ধাপে’ শিথিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
Published : 08 Aug 2021, 05:02 PM
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “গত সভায় যেটা আলোচনা হয়েছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সভাপতিত্ব করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত ছিল ১০ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা। তারপর ১১ তারিখ থেকে ধাপে ধাপে শিথিল করা।
“যদিও শনাক্তের হার কমছে, কিন্তু মৃত্যু দুইশর ওপরে আছে। সে বিষয়ে অবশ্যই আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে। আগামীতে কী পর্যায়ে শিথিল করব, সে বিষয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পাব। সেটা আজ বা কাল জানাতে পারব।”
ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে হয়ত রোববারই, আর তা না হলে সোমবার সকালে প্রজ্ঞাপন হবে।
“কতটুকু শিথিল হবে তা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর জানাতে পারব। আমাদের পরামর্শ ধাপে ধাপে। কোনটি কখন খোলা হবে, কতটুকু পরিসরে খোলা হবে সেটা দেখতে হবে। তবে কঠোরভাবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন হয়, সেদিকে কঠোর ব্যবস্থা থাকবে।”
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি নিম্নআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করেই ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল।
ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলমান এই লকডাউন আগামী ১০ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর কথা গত ৩ অগাস্টের বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
লকডাউন বাড়লেও জীবিতার তাগিদে মানুষ এখন আর বিধিনিষেধ মানছে না খুব একটা। রোববার সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গড়ি চাপ গত কয়েক দিনের মতই বেশি। পাড়া মহল্লার অধিকাংশ দোকানপাটও খোলা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যারা স্বল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক দোকানের জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখনও বন্ধ, কখনও বিধিনিষেধের আওতায়, কখনও বিধিনিষেধ শিথিল করা- এটার মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে। যতদিন পর্যন্ত টিকা দিয়ে আমরা সে অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারি।”
তিনি বলেন, যত কম জনবল নিয়ে অফিস আদালত চালু করা যায়, তাই করা হবে। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো হয়ত এখনই খুলবে না।
সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পদশালীদের পক্ষে যাচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গার্মেন্ট কারখানা বাস্তবতার নিরিখেই খুলে দিতে হয়েছে। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে। স্থানীয়ভাবে যারা উপস্থিত আছেন, তাদের নিয়ে কারখানা খোলার শর্তেই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব শ্রমিক চলে এসেছে।”
কাজের প্রয়োজনে যারা বাড়ির বাইরে আসছে, তাদের টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু দোকানপাট খুলতে হবে- সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেদিকে আমাদের জোর থাকবে। গতকাল থেকে গণটিকা চালু করেছি, এটি ১২ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে।
“আমরা চাইব সবাই যেন মাস্ক পরে। আমরা টিকা কার্যক্রমের মধ্যে যারা দোকানদার, যাদের বাইরে যেতে হয়, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ড্রাইভার-হেল্পারদের প্রায়োরিটি দিয়েছি। যাদের বাইরে আসতে হয়, মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, তাদের প্রায়োরিটি দিচ্ছি। ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে সীমিত পরিসরে শিথিল করার চিন্তা আছে।”
যারা মাস্ক পরবে না, তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা পুলিশকে দেওয়ার পরিকল্পনার অগ্রগতি জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, “এ বিষয়ে গত সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আগামীতে নির্দেশনা পাব, তার আলোকে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে, পাড়া, মহল্লা ও ওয়ার্ডে করোনা সচেতন কমিটি করব।
“মানুষকে বোঝানো, যেন মাস্ক পরেন, কারণ ছাড়া বাইরে না যান এবং জনসমাগম ঘটে এমন জায়গা এড়িয়ে চলেন। অধ্যাদেশ সংশোধন কি পর্যায়ে আছে এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।”