‘এভাবে লকডাউন হয় না, উঠিয়ে দেওয়া উচিত’

বনানী থেকে নিজের গাড়ি চালিয়ে ফার্মগেইট পর্যন্ত আসতে অন্তত তিন জায়গায় যানজটে পড়তে হয়েছে সোলায়মান চৌধুরীকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও পথঘাটের এমন দশায় যারপরনাই হতাশ তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2021, 07:12 AM
Updated : 3 August 2021, 07:26 AM

মানুষকে বিড়ম্বনায় না ফেলে লকডাউন উঠয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ঈদের পর থেকে চলা দ্বিতীয় দফার কঠোর লকডাউনের দ্বাদশ দিনে রাজধানীতে যে মানুষ ও যান চলাচল আরও বেড়েছে তার প্রমাণ মেলে সোলায়মান চৌধুরীর কথাতেই। 

“আপনি দেখেন এই দৃশ্যকে লকডাউন বলে?  আসলে এভাবে লকডাউন হয় না। সরকারের উচিত এটা উঠিয়ে দেওয়া। অযথা মানুষজনকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। কারণ লকডাউন বলেই তো আমি বেরিয়েছি একটু তাড়াতাড়ি মতিঝিল ‍যাব। এরকম জানলে বের হতাম না,” বলেন তিনি।

লকডাউনের মধ্যে কলকারখানা খুলে দেওয়ায় মঙ্গলবার রাস্তায় মানুষ ও যান চলাচল আরও বেড়েছে। শুধু ব্যক্তিগত গাড়িই নয়, পণ্যবাহী ‍যানবাহনসহ রিকশাও চলছে দেদার। কোথাও কোথাও রাজপথে যানবাহনের চাপ সামলাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশকে।

প্রধান সড়কের পাশে থাকা দোকানপাট বন্ধ থাকলেও পাড়া মহল্লার দোকান ঠিকই খুলেছে। লোকজনও প্রতিদিনের কেনাকাটা সারছেন।

আগের মত আইনশৃংখলাবাহিনীর টহল থাকলেও তাদের মানুষজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তাদের তৎপরতা ছিল কম। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার আজিমপুর, পলাশী, লালবাগের অলিগলির দোকানপাট খোলা আর মানুষজনের চলাচলও অনেকটা স্বাভাবিক দেখা গেছে।

একটি মুদি দোকানি হারুন বলেন, “লকডাউন শিথিল হয়ে আসছে। আমাদের বেচাকেনাও গত দুইদিন ধরে বাড়ছে।”

সকালেই অনেক মানুষের চলাচল দেখা গেল চকবাজারে।

লকডাউনের দ্বাদশ দিনে পুলিশের তল্লাশিও থেমে গেছে। গণপরিবহন না থাকলেও বিভিন্ন উপায়ে মানুষের চলাচলও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

সকালে ষাট ফিট সড়কে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই ব্যারিকেড রয়েছে। তবে কেউ অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করছে কিনা সে বিষয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে না। অন্তত ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য রাস্তার ধারে বসে আছেন।

এই সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন রকমের প্রায় ৫০ শতাংশ দোকান খোলা দেখা গেছে। মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণ পরপর রিকশার জট লেগে যাচ্ছিল।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে শ্যামলী স্কোয়ারের সামনেও। এই এলাকার হসপাতালগুলোর সামনে রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কারের জটলা সৃষ্টি হয়। শ্যামলী শিশুমেলার সামনে বেশকিছু ট্রাফিক পুলিশ দেখা গেলেও ছিল না কোনো তৎপরতা।

মিরপুরের রূপনগর, পল্লবী এলাকায় রাস্তায় গাড়ি এবং মানুষের চলাচল বেড়েছে। গলির বেশিরভাগ দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা রেখে বেচাকেনা চলছে। পুলিশের সাইরেন বাজলেই শাটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ক্রেতারাও তখন এলোমেলো হাঁটছিলেন।

ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, সাত মসজিদ রোড এলাকায়ও রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য। অলিগলিতে দোকানপাট খোলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িও টহলে দেখা গেছে।

ধানমণ্ডিতে মুখে মাস্ক ছাড়াই ফল বিক্রি করছিলেন বাসেত।

তিনি বলেন, “মাস্ক আছে। অনেকেই তো এটা পরে না। মানিকগঞ্জ থেকে পিকআপে করে ঢাকায় পেয়ারা আনি। সকাল থেকেই রাস্তাঘাটে অনেক গাড়ি দেখলাম, শুধু বাস নাই। এখন লকডাউন আছে বলে তো মনে হয় না।”