ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার এখনও শুরু না হওয়ার জন্য করোনাভাইরাস মহামারীকেই কারণ দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা; যদিও অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এক বছর পর মহামারীর প্রকোপ দেখা দিয়েছিল।
পাঁচ বছর আগে ঝড়তোলা গুলশান হামলার সঙ্গে জাহাজবাড়ির আস্তানাটির যোগসূত্র থাকার কথা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর আগে ঢাকার যে কয়েকটি আস্তানা গড়েছিল নব্য জেএমবি, তার একটি কল্যাণপুরের এই বাড়িটি।
গুলশান হামলার ২৫ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের বাড়িটির পঞ্চম তলায় অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির নাম তাজ মঞ্জিল হলেও ভবনের আকৃতির কারণে স্থানীয়রা একে জাহাজবাড়ি বলেন, আর সেই নামটি গণমাধ্যমেও উঠে আসে।
অভিযান শেষে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গির নিহত হওয়ার খবর আসে। হাসান নামে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন। পালিয়ে যান একজন। তারা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলেই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরদিন ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ (২), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
পরের বছরের ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তারও দুই মাস পরে ১৮ জুলাই ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
এখনও অভিযোগ গঠন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনের মধ্যে কয়েকটি তারিখে কাশিমপুর কারাগার থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে আনা যায়নি। এটাই বিচার শুরু হওয়ায় দেরির বড় কারণ।”
আবার এক আসামির পলাতক থাকাকেও কারণ হিসাবে দেখান তিনি।
“মামলায় কোনো আসামি পলাতক থাকলে বিচার শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। এ মামলায়ও এক আসামি পলাতক রয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, মহামারী শুরুর আগের মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছিল। এখন মামলাটি অধিকতর অভিযোগ গঠনের শুনানি ও আদেশের পর্যায়ে রয়েছে।
২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত ২৩ মার্চ আদেশ দেওয়ার জন্য রেখেছিল মামলাটি। এরপর তা ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এরমধ্যেই মহামারীতে পড়ে দেশ। আদালত হয়ে যায় বন্ধ। আদালতের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে গত ৯ জুন অধিকতর শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর জুলাইয়ের শুরু থেকে আবার বন্ধ রয়েছে আদালত।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করছেন, এ মামলার বেশ কয়েকজন আসামি গুলশান হামলার মামলায়ও আসামি। সেই মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় এই মামলা নিয়ে গা করছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
তবে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছারোয়ার বলেন, “আমরা হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলার পাশাপাশি ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা এসব মামলার বিচারও শেষ করেছি। এ মামলায়ও চার্জ গঠন হয়ে গেলে সাক্ষীদের হাজির করে বিচার শেষ করার চেষ্টা করব।”
এ মামলার আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।
আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক। আব্দুর রউফ ও আবুল কাশেম জামিনে আছেন। অন্য সাত আসামি কারাগারে।
আসামিদের মধ্যে আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনের গুলশান হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে।
রউফ প্রধান, আবুল কাশেম ও সালাহ উদ্দিন কামরানের অব্যাহতি চেয়ে তাদের আইনজীবীরা আবেদন করেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছে, যেন সব আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়।
।”
একই ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাড়ির মালিক হাজী মো. আতাহার উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল পাঁচ মাসের মাথায়। তবে তার বিচারও শেষ হয়নি।