‘গুলির শব্দে মনে হচ্ছিল আজ আর বাঁচব না’

ঢাকার কল্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালিয়েছে, সেই ভবনের এক বাসিন্দার কথায় ফুটে উঠেছে গোলাগুলির মধ্যে সারা রাতের আতঙ্কের চিত্র।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2016, 05:08 AM
Updated : 26 July 2016, 02:45 PM

কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের গার্লস হাই স্কুলের পাশে ৫৩ নম্বর বাড়ির গায়ে ‘তাজ মঞ্জিল’ নাম লেখা থাকলেও স্থানীয়রা ছয় তলা ওই ভবনকে চেনেন ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে।

বাড়িওয়ালা থাকেন বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। প্রতিটি তলায় রয়েছে চারটি করে ফ্ল্যাট। উপরের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ব্যাচেলরা মেস করে থাকেন, যার সুযোগে পঞ্চম তলায় গড়ে উঠেছিল জঙ্গি আস্তানা। 

ভবনের ষষ্ঠ তলায় তিন কক্ষের এক ফ্ল্যাটে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন নয় তরুণ, যাদের মধ্যে আল্লামা ইকবাল অনিক নামে একজন একটি অনলাইন পত্রিকায় কাজ করেছেন কিছুদিন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সাড়ে ১২টার দিকে বাসার আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি তারা টের পান। পরে বুঝতে পারেন, তাদের ভবনেই অভিযান শুরু হয়েছে।

ঘণ্টা দেড়েক পর পুলিশ উপরে ওঠার চেষ্টা করলে শুরু হয় গোলাগুলি। অনিক ও তার সঙ্গে থাকা তরুণদের সবাই আতঙ্কে বাসার দরজা ভেতর থেকে আটকে রান্না ঘরে গিয়ে অবস্থান নেন।

“সারাটা রাত আমরা রান্নাঘরে লুকিয়ে ছিলাম। একটু পর পর গুলির শব্দ। খুব ভয় হচ্ছিল। গুলির শব্দে মনে হচ্ছিল আজ আর বাঁচব না।”

ভোরের দিকে সোয়াটের অভিযানের সময় গোলাগুলির তীব্রতা বেড়ে গেলে পরিচিত এক সাংবাদিককে এসএমএস করে অনিক বলেন, “আমরা অভিযানের মধ্যে বাসায় আটকা পড়েছি। আমাদের বাঁচান।” 

ঢাকার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করা অনিকের দেশের বাড়ি কুড়িগ্রামে। ওই বাসায় তিনি আছেন গত পাঁচ বছর ধরে। 

পুলিশ জানিয়েছে, পঞ্চম তলার সাতটি কক্ষ সন্দেহভাজন ওই জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল। নিহতদের মধ্যে সাতজনের লাশ পাওয়া গেছে করিডোরে, দুজনের লাশ ছিল দুটি কক্ষে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল। ওই বাসা থেকে আরও বেশ কিছু নতুন কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে একটি গ্রেনেড ও একটি পিস্তল পাওয়া গেছে।”

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকও সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযানের সময় জঙ্গিরা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের পরনে কালো রঙের জঙ্গি পোশাক ছিল, মাথায় ছিল পাগড়ি; হাতে ছিল ব্যাগ।”

গুলশানে ‘জেএমবির যে গ্রুপটি’ হামলা চালিয়েছিল, এরা সে দলেরই সদস্য বলে আইজিপি শহীদুল হকের ধারণা।