করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সোমবার থেকে কঠোর লকডাউনের কথা বললেও সেই কড়াকড়ি পরে তিন দিন পিছিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
Published : 28 Jun 2021, 07:12 PM
সোমবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের কারণেই সরকারকে নতুন ঘোষণা দিতে হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সোমবার থেকে লকডাউনের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু ৩০ তারিখ যেহেতু অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায় পরিপূর্ণ লকডাউনের পরিবর্তে কিছু বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত আরোপ করা হয়।”
এর অংশ হিসেবে সোমবার থেবেই গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বল্প সংখ্যক মানুষকে অফিস করার কথা বলা হয়েছে। ১ তারিখ থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এবারে লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকার পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীকেও প্রয়োজনীয় জায়গায় মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ জারি করে। শুরুতে ঢিলেঢালা লকডাউনের পর ১৪ এপ্রিল শুরু হয় ‘কঠোর লকডাউন’।
তাতে সংক্রমণ কিছু কমলে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলেরও অনুমতি দেওয়া হয়।
জুনের শুরু থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার কঠোর বিধিনিষেধের পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে সোমবার থেকে সারাদেশেই সারা দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ জারির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গত শুক্রবার। কিন্তু পরদিন বলা হয়, সোমবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ আরোপ করে ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর’ হবে সরকার। তখন অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বের হওয়া যাবে না।
সরকারের দফায় দফায় সিদ্ধান্ত বদলের সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনে লকডাউন-শাটডাউন নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি এবং তা ঘন ঘন সংশোধন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অদলবদল করা। এসব বক্তব্য বিবৃতির মধ্য দিয়ে অস্থিরতাই প্রকাশ পাচ্ছে।”
এভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত বদলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে কিনা- সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা রেখেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সামনে।
উত্তরে তিনি বলেন, “সরকার শুরু থেকে যেভাবে জীবন রক্ষা ও জীবিকা রক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে, সে কারণে করোনাকে আমরা আমাদের দেশে অনেক দেশের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
“সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট, যেটাকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বলা হচ্ছে, সেটি আসার কারণে আমাদের দেশে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও অতীতের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সে কারণে সরকার কিছু বিধিনিষেধ প্রাথমিকভাবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আরোপ করেছে।
“পরবর্তীতে ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে আরোপ করা হয়েছে। যেহেতু জনগণ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা প্রয়োজন ছিল সেভাবে মানছে না, বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগে যে ভীতিটি ছিল, করোনা নিয়েছে ভীতিটা এখন আর নেই। যে কারণে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে।”
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে লকডাউন বা শাটডাউন কোনটারই প্রয়োজন হত না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা হাছান।
তিনি বলেন, “যেহেতু জনগণ সেটি ঠিকমতন অনুসরণ করেনি, তাই আমাদের কঠোর লকডাউনে যেতে হচ্ছে। এবার যদি এটির কেউ ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সেনাবাহিনী কীভাবে মোতায়ন করা হবে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সেনাবাহিনীর সদস্যরা তো দেশ রক্ষার কাজেই কাজ করে। বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সবসময় পালন করে আসছে। এটাও জাতির জন্য একটি দুর্যোগ। ফলে এই দুর্যোগের সময় তাদের সহযোগিতা যেখানে প্রয়োজন হয়, সেখানে নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে আইন প্রয়োগ করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয় না।”
মগবাজারে রোববারের বিস্ফোরণের ঘটনা সরকারের ‘উদাসীনতায় হয়েছে’ বলে যে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন, সে বিষয়েও তথ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়েছে গ্যাস বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এগুলো আমাদের দেশে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের পর থেকে ঘটছে। এটির মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসা, সরকারকে নিয়ে আসা… কখন যে মির্জা ফখরুল বলে বসেন টায়ার ফাটলেও সেটি সরকারের উদাসীনতার কারণে হয়েছে, আমি সেই চিন্তা করছি।”
খালেদা জিয়ার ‘সুচিকিৎসা হচ্ছে না’ বলে যে দাবি বিএনপি নেতারা করে আসছেন, সে বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা পেয়েছেন, যে কারণে তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি যদি সুচিকিৎসা না পেতেন তাহলে তিনি সুস্থ হতেন না।
“সরকার তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, তার পছন্দের ডাক্তাররাই তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেজন্য সরকাকে বিএনপির ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন ছিল।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। তার স্বাস্থ্য নিয়ে তারা বেশি বেশি চিন্তিত না। উনারা চান খালেদা জিয়া আরও বেশি অসুস্থ হোক। খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে যে বাড়ি ফিরে গেছেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে মনে হয়নি যে এটি তাদের পছন্দ হয়েছে। কারণ খালেদা জিয়া হাসপাতালে থাকলে তার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করতে সুবিধা হয়।”
আরও পড়ুন