মহামারী নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর আগে সীমিত বিধিনিষেধে শপিংমল-গণপরিবহন বন্ধ হলেও ঢাকার রাস্তায় ভিড় কমেনি।
Published : 28 Jun 2021, 01:09 PM
সোমবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে প্রাইভেট কার, মোটার বাইক আর রিকশা চলছে প্রচুর। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী যাত্রীদের।
দূরের কর্মস্থলে যেতে রাস্তায় গাড়ি না পেয়ে অনেকে রিকশা বা ভ্যানে করে রওনা হয়েছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার থেকে সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ জারির ঘোষণা শুক্রবার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শনিবার জানানো হয়, সেই লকডাউন ১ জুলাই থেকে শুরু হবে। তার আগে সোমবার থেকে তিন দিন থাকবে ‘সীমিত লকডাউন’।
এই সময় পণ্যবাহী গাড়ি ও রিকশা ছাড়া সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। সব শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র খুলবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা নাগাদ শুধু খাবার বিক্রি করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খোলা থাকবে সীমিত জনবল নিয়ে। সেই সব কর্মচারীদের অফিসের ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে।
কিন্তু সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাকরাইল ও শান্তিনগরে পুলিশ সদস্যদের যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
সেখানে দুজন বাইক চালককে জরিমানাও করেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট।
মালিবাগে টুইন টাওয়ার, মৌচাক মার্কেট, শান্তিনগরের কর্ণফুলী শপিংমল, পল্টনের চায়না শপিংমল বন্ধ দেখা গেলেও বেইলি রোড, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে কনফেকশনারি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো খোলা রয়েছে।
কাকরাইলের একটি হাসপাতালের কর্মচারী রোজিনা ইকবাল পায়ে হেঁটে শান্তিনগর থেকে হাসপাতালে গেছেন সকালে।
তিনি বললেন, “সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরও মানুষজনের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে না। দেখেন কীভাবে রাস্তায় নেমেছে। এরকম হলে পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। সরকার লকডাউন দিচ্ছে, কিন্তু মানুষকে অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে। আমাদের অসচেতনতা আমাদের সবার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।”
সকালে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, ধানমন্ডি; রামপুরা, হাতির ঝিল, বাড্ডা; পান্থপথ, ফার্মগেইট, আগারগাঁও, মিরপুর এলাকার চিত্রও ছিল মোটামুটি একইরকম।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মিরপুরের কালশী এলাকায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার মোড়ে।
তাদের একজন বললেন, অফিস থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি, কিন্তু অফিসে না গিয়েও উপায় নেই। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কোনো বাহন পাচ্ছেন না।
কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলেও গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকা।
তেজগাঁওয়ের ইপিলিয়ন গ্রুপের প্যাটার্ন ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আড়াই ঘণ্টা ধরে কালশীতে দাঁড়িয়ে আছি, যেতে পারছি না। সিএনজি চললেও হয়তো যেতে পারতাম। শুধু প্রাইভেটকার আর মোটরসাইকেল। একটা মোটরসাইকেল আসলে পাবলিক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেজন্য উঠতেও পারছি না।”
এ রাস্তায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করে একটি মোটরসাইকেলে উঠতে পেরেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাহুল রায়। তিনি জানালেন, মহাখালী যেতে তাকে সাড়ে তিনশ টাকা দিতে হবে।
“আমার বেতন দিনে কত? কিন্তু কিছু করার নেই, চাকরি বাঁচাতে হবে। সরকার দুই দিন পরপর একটা নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকে। সেটার বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে, রাস্তায় কী হচ্ছে, তার কোনো খেয়াল কি তাদের আছে? ভোগান্তি তো সব পাবলিকের।”
আগারগাঁওয়ে রিকশাওয়ালরা খামারবাড়ী পর্যন্ত ভাড়া চাইছিলেন ৮০ টাকা। জনপ্রতি ৪০ টাকা করে ভাগাভাগি করে অনেকে গন্তব্যে যাচ্ছেন দেখা গেল। এমনিতে এই পথে লেগুনায় নিয়মিত ভাড়া ১০ টাকা, রিকশায় ৫০ টাকা।
আগারগাঁওয়ে কথা হয় আয়কর আইনজীবী শাহিনুল ইসলামের সঙ্গে।
বিধিনিষেধ থাকলেও কালশী বিহারী ক্যাম্প এলাকার খাবারের দোকানগুলো খোলাই দেখা গেল, সেখানে ভেতরে বসেই খাওয়া-দাওয়া চলছে।
রামপুরা, আজিমপুর, বনশ্রী এলাকায় চায়ের দোকান, মোবাইল এক্সেসরিজ, প্লাস্টিক পণ্যের দোকান, সেলুন, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট খোলা রয়েছে।
রামপুরা এলাকায় ডিআইটি রোড ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে বেশি। সড়কের মোড়ে মোড়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর।
সেখানেও অফিসে যেতে বহু মানুষকে সড়কের পাশে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশা বা ভ্যানে চেপেও গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে।
আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকা, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রাইভেট কার ও রিকশার সরব বিচরণ। পুলিশ মোটারসাইকেল পেলে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ জারি হয়। শুরুতে ঢিলেঢালা লকডাউনের পর ১৪ এপ্রিল শুরু হয় ‘কঠোর লকডাউন’।
তাতে সংক্রমণ কিছু কমলে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলেরও অনুমতি দেওয়া হয়।
জুনের শুরু থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার কঠোর বিধিনিষেধের পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।