নয় বছরে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুরাহা করতে না পারলেও এই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব বলছে, ‘অত্যন্ত গুরুত্বের’ সঙ্গে তারা বিষয়টি তদন্ত করছে।
Published : 11 Feb 2021, 08:34 PM
তবে তাদের এই কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না এই সাংবাদিক দম্পতির স্বজনরা। তারা বলছেন, এইভাবে চলতে থাকলে বিচারের আশা ‘সুদূর পরাহত’।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনি। দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ওই রাতে তারা ছাড়া ঘরে ছিল তাদের একমাত্র শিশুসন্তান।
দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তারপর নয় বছর পার হলেও মামলার তদন্তই শেষ করতে পারেনি পুলিশ-র্যাব।
হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমানের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম। তার কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব গিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলমের কাছে।
৬২ দিন পর ডিবি আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করলে ২০১২ সালের এপ্রিলে তদন্তের দায়িত্বে আসে র্যাব। এরপর র্যাবের চারজন কর্মকর্তার হাত ঘুরে তদন্তভার আসে বাহিনীর সিনিয়র সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলমের কাছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের দিন নির্ধারণ থাকলেও তা পারেননি তিনি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সব মিলিয়ে ৭৮ দফায় আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছে র্যাব।
তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা ‘অত্যন্ত গুরুত্বের’ সঙ্গে তদন্ত করছেন।
“বিষয়টি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।”
র্যাবের ভাষ্য মতে, গত নয় বছরে এই মামলার তদন্তে দেড় শতাধিক ব্যক্তির জবাববন্দি নেওয়া হয়েছে।
তবে কত দিনে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে সম্ভাব্য কোনো দিনক্ষণ বলতে পারেননি র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ।
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন কিছু বলার নেই। তবে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বিচার সুদূর পরাহত।
“এরপরও আশা আছে প্রকৃত খুনিরা গ্রেপ্তার হবে এবং আমরা বিচার পাব।”
সাগরের মা সালেহা মুনিরও আশায় আছেন ছেলে ও ছেলে বউ খুনের বিচার পাওয়ার।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন ওই বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও আবু সাঈদ।
রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানকে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিন পান।
যে বাড়িটিতে সাগর-রুনি খুন হন সেই বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালও জামিনে বাইরে রয়েছেন।
এই মামলায় আরও দুজনকে খোঁজা হচ্ছে বলে র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এই হত্যা মামলার আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পরীক্ষায় চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়। তার মধ্যে দুটি ডিএনএ সাগর-রুনির। বাকি দুটি ডিএনএর সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামিদের ডিএনএ মেলেনি। তাদের শনাক্ত করার জন্যে এখনও অনুসন্ধান চলছে।
এদিকে এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
এজন্য একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবাদ সভায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ (ডিআরইউ) সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠন করা হবে।