প্রিমিয়ার লিগের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুটি গোলই করেন আর্লিং হলান্ড।
Published : 15 May 2024, 03:02 AM
যে মাঠে প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচে আগে কখনও জালের দেখা মেলেনি, হারের তেতো স্বাদ জুটেছে প্রতিবার, সেখানে এবারও আক্রমণে কিছুটা ভুগতে দেখা গেল ম্যানচেস্টার সিটিকে। দ্বিতীয়ার্ধে মূল গোলরক্ষক এদেরসন ও প্লেমেকার কেভিন ডে ব্রুইনেকেও হারাতে হলো। তবে, সব বাধা পেরিয়ে, টটেনহ্যাম হটস্পারের আক্রমণ সামলে দারুণ এক জয় তুলে নিল পেপ গুয়ার্দিওলার দল। শিরোপা ধরে রাখার পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি।
টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে লিগের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছে সিটি। দুটি গোলই করেছেন আর্লিং হলান্ড।
এই মাঠে আগের চারটি লিগ ম্যাচের সবগুলোয় হেরেছিল সিটি। খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়েই এই খরা কাটাল দলটি।
৩৭ ম্যাচে ২৭ জয় ও সাত ড্রয়ে ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফিরল সিটি। ২ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে আর্সেনাল।
এই হারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই থেকেও ছিটকে গেল টটেনহ্যাম। ৩৭ ম্যাচে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে তারা। সমান ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে অ্যাস্টন ভিলা। ৪১ বছর পর ইউরোপ সেরার মঞ্চে খেলার সুযোগ পেল দলটি।
চেনা আঙিনায় ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই প্রতিপক্ষের বুকে আঘাত হানতে পারত টটেনহ্যাম। সতীর্থের পাস বক্সের মুখে পেয়ে ভেতরে ঢুকে বিনা বাধায় শট নেন রদ্রিগো বেন্তানকুর; কিন্তু গোলরক্ষকের নাগালের বাইরে শটটা নিতে পারেননি তিনি। একটু লাফিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান এদেরসন।
দুই মিনিট পর উল্টো বিপদে পড়তে বসেছিল টটেনহ্যাম। তবে ডে ব্রুইনের জোরাল শটে বল একজনের পায়ে লেগে দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
নিজেদের ভুলে ষোড়শ মিনিটে গোল খেতে বসে স্বাগতিকরা; পিয়েরে-এমিল হয়বার্গ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পারেননি, একটু উঁচুতে ওঠা বলে ফিল ফোডেনের ভলি দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ভিসারিও।
দলে আক্রমণের রসদ যথেষ্ট থাকলেও, সিটিকে প্রথমার্ধে চেনা ছন্দে দেখা যায়নি। ৩৮তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ অবশ্য তারা পায়। ফোডেনের পাস দূরের পোস্টে ফাঁকায় পেয়ে যান ইয়োশকো ভার্দিওল; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট ভলি মেরে হতাশ করেন আগের সাত ম্যাচে পাঁচটি গোল করা এই ডিফেন্ডার।
বিরতির পর খেলা শুরু হতেই আরেকটি পরিষ্কার সুযোগ পায় সিটি। কিন্তু ডে ব্রুইনের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ভিসারিও। পাল্টা আক্রমণে ৪৯তম মিনিটে গোলমুখে বল পেলেও গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে পারেননি সন হিউং-মিন।
দুই মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত গোলটি পেয়ে যায় সিটি। ডান দিক থেকে ডে ব্রুইনের গোলমুখে বাড়ানো বল আলতো এক ছোঁয়ায় গোললাইনের ওপারে পাঠিয়ে দেন হলান্ড।
প্রিমিয়ার লিগে এই মাঠে প্রথম গোলের দেখা পেল সিটি, হলান্ডের ক্যারিয়ারে সহজতম গোলগুলোর একটি; তবে এই গোলই হয়তো দলটিকে শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে নিল বড় এক ধাপ।
৬২তম মিনিটে একটি আক্রমণ রুখতে ঝাঁপিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন এদেরসন, ঠিক একই সময়ে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, এতে মুখে আঘাত পান ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক। মাঠে আসে স্ট্রেচার, ডাগআউটে ওয়ার্ম-আপ করতে দেখা যায় আরেক গোলরক্ষককে; তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এদেরসন।
তবে কিছুক্ষণ পরই তাকে তুলে নেন কোচ গুয়ার্দিওলা। বদলি নামান স্টেফান ওর্টেগাকে। তবে, সিদ্ধান্তটি হয়তো পছন্দ হয়নি এদেরসনের, বেঞ্চে গিয়ে বসার আগে লাথি ছুড়তে দেখা যায় তাকে।
একই সঙ্গে প্লেমেকার ডে ব্রুইনেকেও তুলে নেন কোচ, কিছুক্ষণ আগে তিনিও চোট পেয়েছিলেন। তার বদলি নামেন জেরেমি দোকু।
সময় যত ফুরিয়ে আসতে থাকে, টটেনহ্যামও মরিয়া হতে থাকে। ৮০তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে দেইয়ান কুলুসেভস্কির শট রুখে দেন ওর্টেগা। ছয় মিনিট পর সমতা টানার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন হিউং-মিন। প্রতিপক্ষের ভুলে বল ধরে ডি-বক্সে শট নেন তিনি, কিছুটা এগিয়ে এসে দারুণ নৈপুণ্যে তা ঠেকিয়ে দেন ওর্টেগা।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে জেরেমি দোকু ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় সিটি। আর সফল স্পট কিকে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন হলান্ড।
প্রিমিয়ার লিগে টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট জয়ের পথে আরও এগিয়ে গেলেন তিনি, তার গোল হলো ২৭টি।
গোলটির পর সিটির খেলোয়াড়রা যেভাবে উল্লাস করে, তাতেই যেন ফুটে উঠছিল এর মাহাত্ম। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পরও হলান্ড-ফোডেনদের চোখে-মুখে দেখা যায় বিশাল এক বাধা পেরোনোর উচ্ছ্বাস।
আগের দিন গুয়ার্দিওলাও বলেছিলেন, শিরোপা জিততে হলে টটেনহ্যামের মাঠে জিততেই হবে, নয়তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে আর্সেনাল। সেই লক্ষ্যে দারুণভাবেই এগিয়ে গেল তারা। প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা চারবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্নে বিভোর দলটি শেষ রাউন্ডে খেলবে ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে।