ছেলেধরা গুজবে ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার এক বছরের বেশি সময় পর পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর পথ তৈরি হল।
Published : 10 Sep 2020, 10:30 PM
১৫ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার অভিযোগপত্র ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করেছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে যে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর রয়েছে। আর মো. মহিউদ্দিন (১৮) নামে একজন পলাতক।
বাকি ১২ জনের মধ্যে ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লাকে (২০) প্রধান আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যরা হলেন- রিয়া বেগম ওরফে ময়না বেগম (২৯), আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাদ মন্ডল (৫০), কামাল হোসেন (৪০), মো. শাহিন (৩২), মো. বাচ্চু মিয়া (৩৬), বাপ্পী ওরফে শহিদুল ইসলাম (২১), মুরাদ মিয়া (২৬), সোহেল রানা (৩০), আসাদুল ইসলাম (২২), বিল্লাল মোল্লা (৩২) ও রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন (২৩)।
তদন্তে রেনুকে পেটানোর ঘটনায় মোট ১৯ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আব্দুল হক।
তবে অভিযোগপত্রে বলা হয়, আলিফ, মারুফ, সুমন ও আকলিমা নামে চারজনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গত বছরের মাঝামাঝিতে ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকটি আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
তার এর মধ্যেই ওই বছরের ২০ জুলাই ঢাকার উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তসলিমা রেনুকে (৪২) পিটিয়ে মারা হয়। তিনি তার মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য খবর নিতে সেখানে গিয়েছিলেন।
ওই ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হলে পুলিশ তৎপর হয়; গণপিটুনিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের কথাও তখন জানানো হয়েছিল।
রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু তখন অজ্ঞাত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে বাড্ডা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগমসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও আসামি করতে চেয়ে আদালতে সম্পূরক এজাহার দাখিল করেন তিনি। তখন আদালত তা তদন্তের নির্দেশ দেয়।
মামলার পর প্রথমে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রায় ৫ মাস তদন্ত করেন। অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার করেন তিনি। এর মধ্যে তিনজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর মামলা তদন্তের ভার যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে পাঁচজন রিয়া বেগম, বাচ্চু মিয়া, মো. শাহীন, মো. মুরাদ মিয়া, মো. বাপ্পি জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
রেনু হত্যামামলার বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
তার বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বোনের ছেলে-মেয়ে দুটি বারবার তাদের মায়ের কথা বলে। তারাও ঘটনার বিচার চায়।”
রেনু লেখাপড়া শেষে আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন। স্কুলেও করেছেন শিক্ষকতা। ২০১৭ সালে স্বামী তসলিম হোসাইনের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে।
এরপর মায়ের সঙ্গে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটের একটি ভাড়া বাসায় দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন তিনি।
সন্তানদের ভর্তি করাতে খবর নিতেই উত্তর বাড্ডার স্কুলটিতে গিয়েছিলেন রেনু, সেখানেই হত্যার শিকার হন তিনি।