করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে না পারায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রশাসক বসিয়েছে সরকার।
Published : 04 Aug 2020, 01:38 PM
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে এই সিটির প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়েছে নির্বাচন স্থগিত করতে। তাই আইন অনুযায়ী সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে ফাইল তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন, রাজনীতিতে সব সময় সক্রিয় ছিলেন।
সুজনকে একজন ‘বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে তাজুল বলেন, “সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে সিটি করপোরেশনের অনেক ব্যাপারেই তিনি অবহিত। সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবেও তার বেশ প্রচার আছে। এ বিষয়গুলোই হয়ত প্রধানমন্ত্রী আমলে নিয়েছেন।”
“দীর্ঘদিন আমি প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে কাজ করেছি। উনার ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলাম। দেখেছি কীভাবে নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে হয়। চট্টগ্রামবাসীর সমস্যা-সঙ্কট, হাঁড়ির খবর আমি জানি। উনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি কাজ করব।”
মহামারীর কারণে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনায়ন চেয়েছিলেন সুজন। তবে দল মনোনয়ন দেয় নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে।
এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে দেখা গেলেও এবার তা হয়নি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল বলেন, “আসলে প্রতিষ্ঠানটা, পদটা একজন রাজনৈতিক নেতার। কখনও কোনো প্রতিকূল অবস্থায় কোথাও কোথাও সরকারি কর্মকর্তা দেওয়া হতে পারে।
“কিন্তু সঙ্গত কারণে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই এখানে ভালো করবেন এবং এটাই সারা পৃথিবীতে প্রমাণিত। ঢাকাতেও প্রশাসক ছিল, তারপর যখন জনপ্রতিনিধিরা এসেছেন, পরিস্থিতির উন্নতির বড় ধরনের লক্ষণ দেখেছি। আমার মনে হয় এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত।”
আরেক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে করার বাধ্যবাধকতা আছে। সেজন্যই সম্প্রতি মহামারীর মধ্যেও কয়েকটি আসনে উপ নির্বাচন হয়েছে।
“তবে আইন অনুযায়ী দরকার হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করার সুযোগ আছে। এই সুযোগটাই নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করেছে।”
স্থানীয় সরকার নির্বাচন (সিটি করপোরেশন) আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে এর মেয়াদ। আর করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।
আ জ ম নাছির চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে ৬ অগাস্ট। সে হিসাবে এ সিটির বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ অগাস্ট বুধবার।
মেয়াদপূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে এ সিটির নির্বাচন করতে ২৯ মার্চ ভোটের তারিখ রেখে তফসিল দিয়েছিল ইসি। কিন্তু মহামারীর কারণে ভোটের সপ্তাহ খানেক আগে ২১ মার্চ তা স্থগিত করা হয়।
পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে এক চিঠিতে বলে, “বর্তমানেও করোনা প্রভাব অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং অতি বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদকালের মধ্যে অর্থাৎ ৫ অগাস্টের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।”
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে প্রশাসক বসানো হবে, তা সেদিনই জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন (সিটি করপোরেশন) আইনের ২৫ ধারায় (অবস্থা বিশেষে প্রশাসক নিয়োগ) বলা হয়েছে- নতুন সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন বিভক্ত করা হলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সরকার নতুন সিটি করপোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। প্রশাসকের কাজে সহায়তার জন্য সরকার প্রয়োজন মনে করলে একটি কমিটিও করে দিতে পারবে। প্রশাসক এবং সেই কমিটির সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না প্রশাসক। |
স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৫৫ পদে ২৬৯ প্রার্থী রয়েছেন ভোটে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রশাসক বসানো হলেও সুবিধাজনক সময়ে মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রার্থীরাই বহাল থাকবেন এবং যেখানে ভোট স্থগিত হয়েছিল সে অবস্থা থেকে নির্বাচন হবে।
তবে মৃত্যজনিত যেসব পদ এর মধ্যে শূন্য হবে সে বিষয়ে কমিশন তখন সিদ্ধান্ত নেবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপির শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন (মিনার), এনপিপির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র খোকন চৌধুরী (হাতি)।