জুলাইয়ের প্রথমার্ধে দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্লাবিত দেশের অন্তত এক চতুর্থাংশ জেলার নিম্নাঞ্চল।
Published : 17 Jul 2020, 10:38 PM
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে উপদ্রুত এসব জনপদের প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে।
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীর প্রদাহসহ নানা রোগে প্রায় তিন হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, ৩০ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে নানাভাবে। এর মধ্যে পানিতে ডুবে ৪৪ জন, ডায়রিয়ায় একজন, সাপের কামড়ে তিনজন ও বজ্রপাতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
লালমনিরহাটে নয়জন, কুড়িগ্রামে ১৪ জন, গাইবান্ধায় সাতজন, রংপুরে দুইজন, সুনামগঞ্জে একজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, জামালপুরে ১৪ জন, টাঙ্গাইলে তিনজন ও নেত্রকোণায় দুইজন মারা গেছেন।
হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্লাবিত এলাকায় ৩৫৭ জন রোগাক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন পাঁচজন। দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে।
ত্রাণ তৎপরতা
শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৮ জেলার নিম্নাঞ্চলে ৫২৩টি ইউনিয়ন বন্যা উপদ্রুত। এসব এলাকার পাঁচ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৬ পরিবার পানিবন্দি। এর মধ্যে ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রয়েছে।
১৮ জেলায় ১৪৮৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে: আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ >>২৬,১৪৬ জন পুরুষ, ২৩,৩৭৬ জন নারী, ১২৯৫০ জন শিশু, প্রতিবন্ধী ১৩৫ জন। গবাদি পশু আনা হয়েছে ৫৫ হাজারের বেশি >> ৩৪৫৭৩ গরু/মহিষ, ২১৩১২ ছাগল/ভেড়া, এছাড়া আরও ১১৭টি নানা ধরনের পশু।
|
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, ৫৯৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হলেও এর মধ্যে ১৯৭টি টিম কাজ করছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও প্রতিনিধিরা কাজ করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি ক্ষয়ক্ষতি
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব জেলায় ধান কাটা শেষ হওয়ায় বন্যায় পাট, ডাল ও শাকসবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আমন ধানের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি সামলাতে কৃষি মন্ত্রণালয় উঁচু জায়গায় আমনের বীজতলা করে কৃষকদের বিনামূল্যে তা সরবরাহ করবে।
“এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমরা আশা করছি। কারণ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে, যেসব নদীন পানি বাড়ছে সেগুলোর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমতে শুরু করবে,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী-সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকতে পারে।
কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি বন্যা
উজানের পানি কমতে থাকায় দেশের উত্তরাঞ্চেলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরফিুজ্জামান ভুইয়া।
২০ জুলাইয়ের পরে ফের পানি বেড়ে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও ১০ দিন দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানি বাড়লেও বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা নেই।