বুধবার কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা-বহ্মপুত্র-যমুনার সম্মিলিত প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি এ সময়ে বেশ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাতে ঢাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভরা বর্ষায় শ্রাবণ মাসের শুরুতে ১৯ ও ২০ জুলাই থেকে মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় হবে। তাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার প্রদেশে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এসময় গঙ্গার পানি টানা ৫ দিন বাড়তে পারে। তাতে বহ্মপুত্র-যমুনার পানির বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং গঙ্গা-বহ্মপুত্র নদের সম্মিলিত প্রভাবে পদ্মা নদীর পানি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
“এতে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ী, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। কোথাও কোথাও নতুন করে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা জেলার আশপাশের নিম্নাঞ্চলেও স্বল্পমেয়াদী বন্যার শঙ্কা রয়েছে।”
বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ২৬ জুলাই থেকে পদ্মার পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে কমবে। তাতে গঙ্গা অববাহিককায় বন্যা পরিস্থিতি জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।
মধ্যাঞ্চলে অবনতি
মেঘনা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছেই। তাতে মৌসুমের দ্বিতীয় দফা বন্যায় মধ্যাঞ্চলের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫৬টি পয়েন্টেই বুধবার পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপৎসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে ২১টি পয়েন্টে। এছাড়া ৪১ স্টেশনে পানি কমেছে; ৪টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।
কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে অবনতি হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীর পানি যেভাবে বাড়ছে, আগামী দুই দিন তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আপার মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি কমছে, তা আরও দুদিন অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর সুমেশ্বর পয়েন্টে পানি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমা পেরিয়ে যেতে পারে বলে জানান আরিফুজ্জামান।
এবারের বন্যায় এরই মধ্যে দেশের ১৭ জেলার ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, বন্যা আরও বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত হয়ে আরও সপ্তাহ দুয়েক স্থায়ী হতে পারে। বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
চলতি মৌসুমে প্রথম দফার বন্যা শুরু হয় ২৭ জুন। এরপর ৭ জুলাই থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু ১১ জুলাই থেকে ফের নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকলে শুরু হয় দ্বিতীয় দফা বন্যা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা ১৭ জুলাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকতে পারে। সব মিলিয়ে ২৩টি জেলায় বন্যা বিস্তৃত হতে পারে। দ্বিতীয় দফার এ বন্যা দুই সপ্তাহের মত দীর্ঘায়িত হবে।
আরও পড়ুন -