ভারত, চীন ও নেপালের পানিতে বাংলাদেশে বন্যা: প্রতিমন্ত্রী

প্রায় প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশের একটি বিস্তৃত অঞ্চল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ লাখের বেশি মানুষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2020, 11:59 AM
Updated : 14 July 2020, 12:10 PM

এই বন্যার কারণ অনুসন্ধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি, আসাম ও ত্রিপুরা এবং চীন ও নেপালের পানি এসে বাংলাদেশে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এরইমধ্যে দেশের ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত এবং ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বন্যা আরও বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত হয়ে আরও সপ্তাহ দুয়েক স্থায়ী হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন করে ২৩ জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

ধরলা নদীর পানির চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুক।

“এই মুহূর্তে বন্যাক্রান্ত ১৭টি জেলার ৪৬৪টি ইউনিয়নে দুই লাখ ৯৪ হাজার ২৭৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন।”

এনামুর বলেন, “আমাদের মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ত্রাণ প্রস্তুত ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণ করে তাহলে অতীতে যেমন বড় বড় বন্যা মোকাবেলা করেছি, একইভাবে এবারও মোকাবেলা করতে পারব, মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে পারব।

“সরকারের ত্রাণ সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার মতো সক্ষমতা আছে। আরও যত বড় দুর্যোগ আসুক না কেন, দুর্যোগ যত দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার মতো সক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের আছে।”

বেশি বন্যা কবলিত ১২টি জেলায় এক হাজার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেখানে ২০ হাজার ১০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের রান্না করা খাবার দিতে সেইসব জেলার ডিসিদের পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

এনামুর জানান, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই বৃদ্ধিটা অব্যাহত থাকবে। কুশিয়ার ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় পানির সমতল কমছে, এটা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি কমবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

“অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।”

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২৭ জুন থেকে যে বন্যা শুরু হয়েছিল সেটা আগাম বন্যা ছিল, সেটা ৬-৭ জুলাই থেকে উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু ১১ জুলাই থেকে আবার পানি বেড়েছে। পানিটা ১৭ জুলাই সর্বোচ্চ বাড়বে। সেই বৃদ্ধিটা আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হবে। ২৩টি জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে।

এখন পর্যন্ত বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোতে আট হাজার ২১০ মেট্রিক টন চাল, দুই কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গো-খাদ্যের জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কিনতে আরও ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

এছাড়া নদী ভাঙনে যাদের ঘর ভেঙেছে তাদের জন্য ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং নয় লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এনামুর।