বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পর সবার মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করলেও ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
Published : 10 Mar 2020, 02:04 PM
মঙ্গলবার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে অন্যান্য দিনের মতো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা গেলেও সতর্কতা হিসেবে অনেককেই মাস্ক পরে আসতে দেখা গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা বলছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে তারা তা বাস্তবায়ন করবেন।
গত রোববার বিদেশফেরত তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগ পরীক্ষা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ওইদিন শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যায়। পরদিন সোমবার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল দোলযাত্রার ছুটি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়লেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আপাতত স্বাভাবিকভাবেই চালিয়ে যাওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার জানিয়েছেন। আর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই তা নেওয়া হবে।
নিজের মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে জানিয়ে পাপিয়া সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছি।
“ভয় তো আছেই, কারণ এত ছোট বাচ্চা, ওরা তো এতকিছু বোঝে না। স্কুলে ওরা যতক্ষণ থাকে ওদের করোনা থেকে প্রোটেকশনের জিনিসপত্রগুলো স্কুল থেকে ব্যবহারের জন্য দিলে ভালো হয়।”
সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করা পর্যন্ত মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। তিনি নিজেও মাস্ক পরে স্কুলের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।
ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের আনানেওয়া করা দুইজন ভ্যানচালকও জানান, তাদের ভ্যানে প্রতিদিন যতজন স্কুলে আসত, মঙ্গলবারও ততজনই এসেছে।
ভ্যানচালক গুলজার হোসেন বলেন, “আমার ভ্যানে ক্লাস ওয়ান ও থ্রির ছয়জনকে আনি, আজও ছয়জনই আসছে।”
আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন ভ্যানচালক জানান, তিনি ক্লাস ওয়ানের তিনজনকে নিয়মিত স্কুলে আনা-নেওয়া করেন, মঙ্গলবার তিনজনই স্কুলে এসেছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সামনে নিলুফা বেগম নামের একজন অভিভাবক বলেন, অন্যদিনের চেয়ে মঙ্গলবার অভিভাবকদের উপস্থিতি কিছুটা কম বলে তার ধারণা।
“গেইটে জটলাটা আজ একটু কম মনে হচ্ছে। অন্যদিন এই ভিড় আরেকটু বেশি থাকে।”
মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মাস্ক কিনতে দেখা যায়।
‘প্রতিদিনের সংবাদ’ পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, “ভয় তো কিছুটা আছেই। তবে আমরা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েই এসেছি।”
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান দুপুরে জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
“উপস্থিতি কম না। তবে অনেক শিক্ষার্থী মাস্ক পড়ে এসেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে করণীয় কি, সেই লিফলেট আমরা শিক্ষার্থীদের দিয়েছি, গেইটেও পোস্টারিং করেছি।”
স্কুল বন্ধের মত কোনো পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কিনা, এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে শাহান আরা বলেন, “এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। অযথা প্যানিক সৃষ্টি করব না।”
কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ফারহানা সিদ্দিকীও তার প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতির কথা জানালেন।
“এখনও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় লক্ষ্য করিনি। আমরা করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক পোস্টারিং করেছি।”
যোগাযোগ করা হলে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, “আজও শতভাগ উপস্থিতি আছে। ওদের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক নেই।”
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয়টি ক্যাম্পাসে চিকিৎসকের পাশাপাশি সেবিকারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়মিত দেখভাল করেন বলে জানান ফরহাদ।
“শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমসহ নানাভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ কী কী নিতে হবে সে বিষয়ে আগেই জেনে গেছে, তাই আমাদের চিকিৎসকরা নতুন করে তাদের এ নিয়ে কিছু বলেননি।”