হোম
+
নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়ার সঙ্গে মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 09 Mar 2020, 09:52 PM
তিনি বলেছেন, অযথা মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী ধরা পড়ার পরদিন সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে একথা বলেন শেখ হাসিনা।
শতাধিক দেশে ছড়িয়ে লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত এবং সাড়ে ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটানোর পর রোববার বাংলাদেশে প্রথম তিনজন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে।
এতে আতঙ্কিত হয়ে মাস্ক ও স্যানিটাইজার কেনার হিড়িক পড়েছে; যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত না হলে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। আর স্যানিটাইজারের চেয়ে প্রচলিত সাবানকেই বেশি কার্যকর বলছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘরের মধ্যে মাস্ক পরে ঘোরার দরকার নাই। যদি কেউ নিজে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে মাস্ক পরা দরকার এই কারণে, যে তার দ্বারা অন্য কেউ যাদে সংক্রমিত না হয়। অহেতুক মাস্ক পরার দরকার নেই। আর হাতকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।”
এখন সবাই মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনতে ‘উন্মাদ’ হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সবাই যে যার মতো একগাদা করে কিনে রাখছে। এগুলো পাগলামি ছাড়া আর কিছু না।
“অযথা মাস্ক কিনে জমা করে রাখা, স্যানিটাইজার কিনে জমা করে রাখা, টিস্যু কিনে জমা করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এক সপ্তাহ পরে হয় ফেলে দিতে হবে বা বেচে দিতে হবে।”
“কোনো কোনো পত্রিকা দেখা যাচ্ছে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি জানি না, তাদের এসব বিক্রি করার কোনো কোম্পানি বা এজেন্সি আছে কি না, যার জন্য তারা এগুলো কিনতে বলছে,” বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে করোনাভাইরা শনাক্তের পর ঢাকায় ছোট বড় অনেকের মুখেই এখন মাস্ক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিয়ে হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে কী কী করতে হবে, কী কী করা যাবে না, তাও সভায় হাতে-কলমে দেখিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আমাদের এত দুঃশ্চিন্তা করার দরকার নাই, তবে সাবধানে চলা ভালো। এটা যে প্রাণঘাতী একটা রোগ, বা মৃত্যু অবধারিত, এমন কিছু তা না। চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়া যায়।”
বয়স্কদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বৃদ্ধদের আক্রমণ করলে একটু ভয় আছে। কারণ বৃদ্ধকালে কারও ডায়াবেটিস থাকে কারও কিডনি সমস্যা থাকে, কারও হার্টে সমস্যা থাকে, তাদের জন্য এটা ক্ষতিকর। তবে যারা যুবক শ্রেণির তাদের জন্য চিন্তার কিছু নেই।
“সেজন্য আমি বলব, কোনো রকম দুঃশ্চিন্তা করার দরকার নেই, দুঃশ্চিন্তা আমাদের মতো বৃদ্ধদের কিছুটা থাকতে পারে। কিন্তু যুবক শ্রেণিদের জন্য এত চিন্তার কিছু নেই।”
আক্রান্ত যে তিনজনকে পাওয়া গেছে, তাদের আলাদা স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবধরনের প্রস্ততি সরকারের রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকায় আমরা তিনটি হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট করে রেখেছি। আর জেলা-উপজেলার ডাক্তার- নার্সদের ট্রেনিং দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে।
“বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের সব জায়গায় আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। এটার প্রভাব যাতে বাংলাদেশে না পড়ে, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সেই দিক থেকে এখন থেকে হ্যান্ডশেক করা বন্ধ, সেটা একদিক থেকে ভালোই হয়েছে।
করোনাভাইরাসের এই সময়ে কী কী স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, হাঁচি শিষ্টাচার কীভাবে মেনে চলতে হবে, তা সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দেখিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল
স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে আয়োজনের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “অনেক দেশ তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিও স্থগিত করেছে। সেটা চিন্তা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ, আমাদের আমন্ত্রিত অতিথির অনেকেই কাজের জন্য দেশ থেকে বাইরে যেতে পারছেন না। সেই সমস্যা তাদের আভ্যন্তরীণভাবে রয়েছে, সেটা তারা আমাদেরকে জানিয়েছে। তারা খুবই আগ্রহী আসতে, তার পরেও তাদের সমস্যা হচ্ছে।
“গতকাল সভা করেছিলাম। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেখানে ব্যাপক লোক সমাগম হবে, সেই প্রোগ্রামগুলোকে আমরা পরবর্তীতে তারিখ দেব। সমস্ত জন্মবার্ষিকীর প্রোগ্রাম আমরা পুনর্বিন্যাস করে দিয়েছি। আমরা সপ্তাহ খানেক দেখব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “গতকাল আমাদের পরিবারের সবাই ছিল, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জন্মশতবার্ষিকীর চেয়ে জনগণের কল্যাণটাই বড়।
“জন্মশতবার্ষিকী, এটা আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া। সেটা আমরা উদযাপন করব ভিন্নভাবে, যাতে লোকসমাগম কম হয়। যাতে জনগণ ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।”
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশ স্থগিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ থেকে অনলাইন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
