বাসের ধাক্কায় দুই সহপাঠির মৃত্যুর মামলাটিতে আদালতের রায়ে ‘মোটামুটি সন্তুষ্ট’ হলেও সড়কে এখনও ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে মনে করেন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা।
Published : 01 Dec 2019, 06:15 PM
তারা বলছেন, দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজিবের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার বেশিরভাগই অপূর্ণ রয়ে গেছে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি সড়কের পাশে দাঁড়ানো রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায়, তাতে মিম ও রাজিব নিহত হন।
এরপর রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারা ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামলে ঢাকার সড়ক অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
আরও কঠোর করে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন ও নানা পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসে আট দিন পর ঘরে ফিরেছিল শিক্ষার্থীরা। তারপর ওই বাস দুটির চালকদের গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় বিচার।
রোববার আদালতের দেওয়া রায়ে জাবালে নূর পরিবহনের দুই চালক এবং একজন সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত; খালাস পান এক বাসের মালিকসহ দুজন আসামি।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রমিজ উদ্দিন কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত আন্দোলনের পরে এই রায়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট।”
মোটামুটি কেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এইটা সঠিক বিচার হয়েছে কি না, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।”
এই রায় নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে নিহত মিমের পরিবারও।
শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন ওই আন্দোলন থেকে উঠে আসা প্রথম দাবিই ছিল, দিয়া ও করিমের মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের মৃত্যুদণ্ড।
নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হলেও এই আইনের কঠোরতা নিয়ে আবার প্রতিবাদে মুখর হয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
আন্দোলনে উঠে আসা দাবি নিয়ে সাগর বলেন, তাদের নয়টি দাবির মধ্যে পাঁচটি এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে। শুধু মোটর সাইকেলে হেলমেট পরার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বেশি।
তিনি বলেন, “আমাদের এইখানে আন্ডারপাসের কাজ এখনও শেষ হয়নি, তাই এখনও ঝুঁকি রয়ে গেছে। এটা যত দ্রুত শেষ হবে, ততই আমাদের জন্য ভালো।”
শিক্ষার্থীরা রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে ফুটব্রিজের দাবি তোলার পর আন্ডারপাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এই আন্ডারপাস ব্যবহার করা যাবে বলে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
সেই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল- প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় গতিরোধক বসানো, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারের নেওয়া, শিক্ষার্থীরা সঙ্কেত দিলেই থামিয়ে তাদের বাসে তোলা, সারাদেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করা, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া বন্ধ করা।