রাজধানীর ধানমণ্ডির এক বাসায় এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর শাশুড়ি ও তার গৃহকর্মীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
Published : 01 Nov 2019, 07:30 PM
শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৮ নম্বর (নতুন ১৫) রোডের ওই বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুই নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের পর ওই ভবনের তিন নিরাপত্তাকর্মীসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- টিমটেক্স গ্রুপের এমডি এবং ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী বিথী (১৮)।
শুক্রবার ওই বাসায় নতুন এক গৃহকর্মী কাজে এসেছিল জানিয়ে মনির উদ্দিন তারিম বলছেন, নিরাপত্তাকর্মী বা কর্মচারীদের যোগসাজশে ওই ‘কাজের বুয়াই’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই বাসা থেকে টাকা, তিনটি ফোন, সঞ্চয়পত্র, গয়নাসহ ‘বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রী’ খোয়া গেছে।
ধানমণ্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নজরুল ইনস্টিটিউটের কাছে ওই বাড়ির কর্মচারীরা সন্ধ্যা ৭টার পর ফ্ল্যাটের ভেতর লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আজিমুল হক আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজনের লাশ সোফার কাছে পড়ে ছিল। আরেকজনের মৃতদেহ ছিল পাশের ঘরের মেঝের ওপর। দুজনেরই গলা কাটা।”
ওই বাসার আলমারি ভাঙা ও ঘর তছনছ হওয়ার আলামত দেখার কথা জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “কে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমরা তা তদন্ত করে দেখছি।”
ওই সড়কের ২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে লবেলিয়া নামের ছয় তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট আছে ব্যবসায়ী মনির উদ্দিন তারিমের।
এর মধ্যে দুটো তিনি ভাড়া দিয়েছেন। পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তার শাশুড়ি ও তার গৃহকর্মী। তার উল্টো দিকের ফ্ল্যাট এবং তার ঠিক উপরে ছয়তলার ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্সে বাসায় তারিম ও তার স্ত্রী সন্তানরা থাকেন।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারিমদের পরিবারের কর্মচারী বাচ্চু নতুন একজন গৃহকর্মীকে নিয়ে বিকাল ৩টার দিকে আফরোজা বেগমের বাসায় যায়।
“ঘণ্টাখানেক পর বাচ্চু একবার কোনো কাজে নিচে নামে। তখন তার পরনে ছিল লুঙ্গি। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাচ্চুকে বিল্ডিং থেকে বাইরে যেতে দেখা যায়। নতুন যে কাজের বুয়া এসেছিল, সেও সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে একা বেরিয়ে যায়।”
এক প্রশ্নের জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, বের হওয়ার সময় নতুন ওই গৃহকর্মীর হাতে কোনো ব্যাগ বা কিছু তিনি দেখেননি।
“এই কাজের বুয়াই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। বাসা তছনছ করে গেছে। টাকা, তিনটি ফোন, সঞ্চয়পত্র, সোনাসহ অনেক মূল্যবান জিনিস নিয়ে গেছে।”
তারিম বলেন, সন্ধ্যায় বাচ্চুকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন স্যুপ কিনতে। হঠাৎ করে বাসার এক সিকিউরিটি গার্ড ফোন করে বাচ্চুকে হত্যাকাণ্ডের খবর দেয়।
“বাচ্চু তখন স্যুপ না নিয়েই দৌড়ে চলে আসে। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এখনে দারোয়ানের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।”
তারিমের বাসার কর্মচারী রিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যায় খালাম্মা (তারিমের স্ত্রী) আমাকে ডেকে বলেন, নানু (আফরোজা) ফোন ধরতেছে না, আমি যেন গিয়ে বলি। আমি নিচে দিয়ে কলিংবেল চাপলাম, কেউ খোলে না। পরে ধাক্কা দিয়ে দেখি দরজা এমনিতেই খোলা। ঘরে ঢুকে দেখি নানু মেঝের মধ্যে, চারদিকে রক্ত।”
এ সময় রিয়াজের চিৎকারে তারিমের বাসার আরেক গৃহকর্মী আপেল ছুটে যান।
তিনি পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আফরোজার বিছানা ও আশপাশে রক্ত ছিল। দেখে তার মনে হয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে বিছানা থেকে টেনে পাশে সোফার কাছে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে বিথীর খোঁজ করতে গিয়ে বাসার গেস্ট রুমের মেঝেতে তার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আতিক জানান, বাচ্চু, তিন সিকিউরিটি গার্ড, একজন ক্লিনার এবং একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাত সোয়া ১২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন যে গৃহপরিচারিকার কথা বলা হচ্ছে, তার বয়স ২২-২৩ এর মত।
“তাকে পাওয়া গেলে হত্যার মোটিভ বের করা সহজ হবে। হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিক নিয়ে তদন্ত কাজ চলছে। একজন জড়িত, না আরও কেউ আছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”