ক্যাসিনো বন্ধে অভিযানের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় কাউন্সিলদের মধ্যে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।
Published : 25 Oct 2019, 12:51 AM
ওই এলাকার মোট ছয়জন কাউন্সিলরদের মধ্যে বর্তমানে দুই কাউন্সিলর এলাকায় থাকলেও তারাও কার্যালয়ে আগের মতো নিয়মিত নন।
বাকি চারজনের মধ্যে দুজন সাম্প্রতিক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। একজন অভিযান শুরুর আগেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, আর ফেরেননি। একজন মারা গেছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টিয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোহাম্মদপুরে কাউন্সিলরদের মধ্যে এখন পুরো অস্থির অবস্থা চলছে।”
৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুর তাহের খান গত ২৩ জুন মারা যান। তার এলাকার দায়িত্ব পালন করছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসেম হাসু।
৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় গত দেড় মাস ধরে তার দায়িত্বও পালন করছেন হাসু।
৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শুধু হাসু এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম রতন থাকলেও তাদের বিরুদ্ধেও জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারাও নিয়মিত নন কার্যালয়ে।
এই ছয় কাউন্সিলরের মধ্যে সেন্টু জাতীয় পার্টিতে যুক্ত; বাকি সবাই আওয়ামী লীগের। রাজিব ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক, মিজান মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সেন্টু ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান শুরুর তিন দিন আগে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান।
অভিযানে কয়েকজন ধরা পড়ার পর তিনি এখন আর ফিরছেন না বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনো পরিচালনায় সেন্টু জড়িত ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি কৃষক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজ এই অভিযানেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত ১১ অক্টোবর কাউন্সিল হাবিবুর রহমান মিজান শ্রীমঙ্গলে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র এবং মুদ্রা পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, জেনেভা ক্যাম্পভিত্তিক মাদক ব্যবসা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
কাউন্সিলর রাজিবকে গত ১৮ অক্টোবর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ করছে এলাকাবাসী।
এই দুই কাউন্সিলর গ্রেপ্তার হলেও এখনও তাদের পক্ষে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আবুল হাসেম হাসুর বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি হাসু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। বর্তমানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা আমার সব কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।”
রতনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেলে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আইনেও ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে কাউন্সিলরদের না পেয়ে নানা সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন ওই এলাকার মানুষ।
হাসান নামে লালমাটিয়ার একজন বলেন, চাকরির জন্য তার কাউন্সিলরের সনদপত্র দরকার। কিন্তু তা পেতে তার গলদঘর্ম অবস্থা।
“কে দেবে, কোথায় যাব, কেউ কিছু বলতে পারছে না,” বলেন তিনি।
পানির লাইনের জন্য সাময়িক রাস্তা খননের জন্য কাউন্সিলরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও তা না পাওয়ায় সমস্যায় আছেন বলে জানান বছিলার হাবিবুর রহমান।