ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর স্ত্রী ও ছেলের পরিচালনায় থাকা পাঁচটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Published : 20 Sep 2019, 12:16 AM
দুদকের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশের দেওয়া এক আদেশে ওই সব ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়েছে বলে কমিশনের উপ-পরিচালক ও এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আলম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে বুধবার আদালত থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমরা আদেশের কপি বৃহস্পতিবার পেয়েছি।”
জব্দ হওয়া ব্যাংক হিসাবের মধ্যে বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর একক পরিচালনায় চারটি এবং অপরটি হিসাবটি রাশেদুল ও তা মা রুজি চিশতী পরিচালনা করেন
রাশেদুল হক চিশতীর পরিচালনায় জব্দ হওয়া চারটি হিসাব হলো- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখায় আরসিএল প্লাস্টিকস, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পল্লবী শাখায় আরসিএল প্লাস্টিকস এবং যমুনা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ফিউশন ফুটওয়্যারসের নামে।
এছাড়া যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের জব্দ হওয়া হিসাব পরিচালনা করেন রুজি চিশতী ও রাশেদুল হক চিশতী।
অন্যদিকে চিশতী পরিবারের মালিকানাধীন বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সাইফুল ইসলাম মাতব্বরের পরিচালনায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখার হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
আদালতে ওই সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দুদকের করা আবেদনে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।
সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাব থেকে টাকা বেরিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হবে। তাই এসব হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা জরুরি বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী-ছেলেসহ ব্যাংকটির বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় চারটি মামলা করে দুদক।
সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য বেশি দেখানোসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগে বাবুল চিশতীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এছাড়া গত বছরের ১০ এপ্রিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় বাবুল চিশতীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। আদালতে এ মামলাটির অভিযোগপত্র দিয়েছে কমিশন।
গত বছরের ৮ অগাস্ট দায়ের করা আরেকটি মামলায় বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে ফারমার্স ব্যাংকের অর্থে প্রভাব খাটিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
এরপর একই বছরের ২৮ অক্টোবর একটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া এবং সেই অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয় বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে। এ মামলায় তার সাথে আরও পাঁচজনকে আসামি করে দুদক।