মশা মারতে নতুন ওষুধ এনে ছিটানোর কথা জানিয়ে তার আগে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনার জন্য স্বজন হারানো পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
Published : 07 Aug 2019, 10:08 PM
বুধবার গুলশানে ঢাকা উত্তরের নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের কাছে আমি বিনীতভাবে ক্ষমা চাই। এ ধরনের পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। যার পরিবারে ডেঙ্গু হয়েছে, সেই বুঝবে।”
এবার বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় দেখা দেয় এইডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ; ইতোমধ্যে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
ডেঙ্গুতে প্রায় একশ জনের মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে; যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কেবল ২৩ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু এত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে, দুই মেয়রের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন করে কীটনাশক এনে তা প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশনই।
সংবাদ সম্মেলনে আতিক জানান, এইডিস মশা নিধনে ‘কার্যকর’ ম্যালাথিওন ওষুধ চীন থেকে আমদানি করেছেন তারা এবং তা বৃহস্পতিবার থেকেই ছিটানো শুরু হবে।
“এইডিস মশা নিধনে চীনের ন্যানজিং ইকোফার্ম টেকনোলজি থেকে ম্যালাথিওন ওষুধ এসেছে। মঙ্গলবার এ ওষুধ এসেছে। রাত ১১টার সময় আইইডিসিআর থেকে ওষুধ পেয়েছি। এখন মিক্সিং শুরু হয়েছে। কাল থেকে আমরা পর্যায়ক্রমে এ ওষুধ ছিটাব।”
মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষধু প্রয়োগের আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ছাড়পত্র নিতে হয়।
গত ২ অগাস্ট চীনের ন্যানজিং ইকোফার্ম টেকনোলজি থেকে দুই টন ম্যালাথিওন আসার পরদিন ৩ অগাস্ট তা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ব বিভাগ এবং আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
মেয়র আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীন থেকে একদম হাতে বহন করে নিয়ে আসা হয়েছে এ ওষুধ। কীটতত্ত্ব বিভাগ, আইইডিসিয়ার টেস্টের আগে আমরা ফিল্ড টেস্ট করেছি। তারপর আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাই। তারপর আজকে আমরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।”
আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য আরও ২ টন কীটনাশক আনার পরিকল্পনাও রয়েছে ঢাকা উত্তরের।
মেয়র আতিক জানান, ২ টন কীটনাশনের দাম ২ থেকে ৩ হাজার ডলারের মধ্যে ছিল।
নতুন কীটনাশকের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের ওষুধ থেকে এ ওষুধ আরও কার্যকর। তবে এ ওষুধ আপৎকালীন। এর চেয়েও ভালো এবং কার্যকরী ওষুধ আমরা আনতে চাই।
“শুধু ওষুধ ছিটালেই হবে না। প্রতিটি অঞ্চলে কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স নিশ্চিৎ করা হবে।”
আতিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মশকনিরোধী ওষুধ আনা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব না। ডাইরেক্ট পারসেজ মেথডে ওষুধ নিয়ে আসছি। কিন্তু এটাতে আমি বিশ্বাস করি না।”
নগরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার কথাও জানান কয়েক মাস আগে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আতিক।
তিনি বলেন, “আমরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য ন্যাশনাল ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট করতে চাই। টোটাল মস্কুইটো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইন্টিগ্রেটেড ওয়েতে এগোতে হবে।”
মশার ওষুধ ছিটিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের কাজ থেমে থাকবে না বলেও জানান আতিকুল।
“ওয়ার্ডে জোন ভাগ করে মশার ওষুধ ছিটানো হয়। ওষুধ ছিটানোর পরে রেজাল্ট কী, তা যদি জানতে না পারি, তবে মশার ওষুধ ছিটিয়ে বাস্তবে কোনো কাজ হবে না। আমরা অনুরোধ করেছি, প্রতি মাসে একটি করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। আমরা দেখব, ওষুধের কার্যকারিতা আছে কি না?”
ন্যাশনাল ভেক্টর কন্ট্রোল স্ট্র্যাটেজিক টিম গঠন করে মশা নিয়ন্ত্রক ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।
মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনে আগে যে ওষুধ ছিটাত, তা ‘ফিল্ড টেস্টে’ উৎরাতে না পারায় তা বাতিল করে দিয়ে ওই ওষুধের আমদানিকারক লিমিট অ্যাগ্রো ও নোটনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন।
আতিক বলেন, ২০১৫-১৮ সাল অবধি সময়ে দুটি ওষুধ কোম্পানি সিটি করপোরেশনের এক বিজ্ঞপ্তির বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে ‘মনোপলি বিজনেস’ শুরু করে। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে তিনি এই ‘মনোপলি বিজনেস’ ভেঙে দেন। এখন যে কোনো ওষুধ কোম্পানি চাইলেই মশা মারার ওষুধ আমদানি করতে পারবে।