ঢাকার বাড্ডায় ছেলেধরা গুজবে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার মূল আসামি ইব্রাহিম হোসেন হৃদয় দাবি করেছেন, ঘটনাস্থলে থাকা আরেক নারীর প্ররোচনায় তিনি পিটুনিতে অংশ নিয়েছিলেন।
Published : 24 Jul 2019, 08:46 PM
মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ১৯ বছর বয়সী এই তরুণকে বুধবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হলে তিনি বিচারকের জিজ্ঞাসায় আরেক নারীর উপর দোষারোপ করেন।
আলোচিত এই মামলায় হৃদয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে চেয়েছিল বাড্ডা থানা পুলিশ। আদালত পাঁচ দিন হেফাজতের আদেশ দিয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে সম্প্রতি ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।
এর মধ্যেই গত শনিবার উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তসলিমাকে (৪২) পিটিয়ে মারা হয়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি তার মেয়েকে ভর্তির খবর নিতে ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর তসলিমার বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটো বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
ওই মামলায় ছয়জনকে আটকের পর মঙ্গলবার হৃদয়কে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই ঘটনার ভিডিওতে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা হৃদয়কে রড হাতে নির্দয়ভাবে তাসলিমাকে পেটাতে দেখা যায়।
এই তরুণ ঘটনার পর মাথ্যা ন্যাড়া করে পালিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে হৃদয়কে রিমান্ডে চাওয়ার বিষয়ে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক যুক্তি দেখালেও আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
আসামির কাঠগড়ায় থাকা হৃদয়ের কাছে বিচারক জানতে চান, কেন মারতে গিয়েছিলেন?
হৃদয় বলেন, “এক মহিলা বলে তিনি (রেনু) গলাকাটা। ওই মহিলার ছবিও আছে। ওই মহিলার কথায় তাকে আমি মেরেছি।”
সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাসনা বেগম নামে এক অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,রেনুর উপর হামলাকারীদের অধিকাংশই ছিল বয়সে কিশোর-তরুণ।
বিদ্যালয়ের আয়া জান্নাত বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেনুর কথা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় কেউ কেউ ‘ছেলে ধরা’ আখ্যায়িত করে তাকে মারতে উদ্যত হন। কয়েকজন তখন তাকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে বহু মানুষ জড়ো হয়ে তালা ভেঙে দোতলায় উঠে যায়। তারপর রেনুকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে এনে শুরু করে মারধর।
হৃদয়ে রিমান্ডে চেয়ে আদালত পুলিশের এসআই লিয়াকত আলী বলেন, “ভিকটিম রানুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশবাসী এ ঘটনায় শঙ্কিত। এ আসামি হত্যার মাস্টারমাইন্ড। অন্যান্য আসামিদের শনাক্ত, মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।”
এ সময় বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, “আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে এই সেই হৃদয়?”
তখন তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণ হিসেবে বিচারককে একটি ছবি দেখান।
এরপর বাদীপক্ষে আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম, মাইদুল ইসলাম পলকসহ কয়েকজন আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন।
তারা বলেন, লাশ হয়ে যাওয়ার পরেও তাকে পিটিয়েছে। গুজব নয়, এটা একটা ষড়যন্ত্র। এটা একটা সংঘবদ্ধ দল হতে পারে।
এরপর বিচারক জসীম আসামি হৃদয়কে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
হৃদয়কে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের জানান, এই তরুণের বাবা-মা নেই। স্কুলের সামনে সবজি বিক্রি করেন তিনি। থাকেন ওই এলাকায়।
এই ঘটনার পর পুলিশ তাকে খুঁজছে বুঝতে পেরেই হৃদয় নারায়ণগঞ্জে তার বাড়িতে চলে যান।
বাতেন বলেন, “পরে সেখান থেকে পাশেই তার খালার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বাড়িতে যাওয়ার পর সে মাথা ন্যাড়া করে ফেলে এবং নানীকে কাপড় পুড়িয়ে ফেলতে বলে। কিন্তু তার কাপড় পোড়ানো হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশ সেই কাপড় উদ্ধার করেছে।”
এই হত্যাকাণ্ডে হৃদয়সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। এই ছয়জনের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- জাফর হোসেন, মো. শাহীন, মো. শহীদুল ইসলাম বাপ্পী, মো. বাচ্চু মিয়া, কামাল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ ও একটি শিশু।