ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর এখন সন্দেহভাজন আরেক বিদেশিকে খুঁজছে পুলিশ।
Published : 04 Jun 2019, 01:20 AM
তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি কারও যোগসাজশ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহিদুর রহমান।
ঢাকার খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ইউক্রেইনের এক নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে তার স্বদেশী আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলায় সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে ডিবি। ঢাকার মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল তিন দিন পুলিশ হেফাজতের আদেশ দেন।
ওই ছয়জন হলেন- দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)
তবে তাদের সোমবার হেফাজত না নিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
ডিবি কর্মকর্তা শাহিদুর বলেন, তারা ভিতালি ক্লিমচুক নামে আরেক বিদেশিকে খুঁজছেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর সাতজনকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তারা।
পলাতক ভিতালিকে গ্রেপ্তারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
“ভিতালি ক্লিমচুক ঢাকাতেই আছে বলে আমাদের ধারণা। বেশি দিন তার পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বৈধভাবে তার বাংলাদেশ ছাড়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমান, সড়ক, নৌ বন্দরে তার ব্যাপারে তথ্য দিয়ে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে।”
ইউক্রেইনের এই নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দোভাষীও জোগাড় করেছে ডিবি।
“এর মধ্যে আমরা একজন দোভাষী জোগাড় করে রেখেছি। তার মাধ্যমে আমরা কথা বলব,” বলেন শাহিদুর।
বিদেশি এই চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি কারও থাকার সম্ভাবনা একবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “ঈদের সময় ফাঁকা থাকে, বুথগুলোতে বেশি টাকা থাকে, এসব তথ্য কোনো না কোনো বাংলাদেশির মাধ্যমে পেয়ে থাকতে পারে। সেই বাংলাদেশি এক বা একাধিক হতে পারে।”
‘যেন আলাদিনের চেরাগ’
বাংলাদেশে এর আগে এটিএম বুথে জালিয়াতি হলেও এবারের ঘটনা পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের। এক্ষেত্রে জালিয়াতরা এটিএম মেশিনের সিস্টেম হ্যাক করে টাকা তুলে নেয়।
এই ধরনের ঘটনা দেশে আগে দেখেননি জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহিদুর বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনের কাছে যেসব কার্ড পাওয়া গেছে, তার অধিকাংশ ‘রিরাইট’ করা, যা আগে কখনও ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না।
“তাদের এসব কার্ড যেন আলাদিনের চেরাগ। ঢোকালেই টাকা বের হয়ে আসে। কোনো পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর লাগে না। বাংলাদেশে আগে কখনও এ ধরনের জালিয়াতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”
এর আগে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড বানিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও এভাবে মূল সার্ভারকে অন্ধকারে রেখে কোনো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে না নিয়ে বুথ থেকে টাকা বের করার ঘটনা বাংলাদেশে জানা গেল এই প্রথম।
এর আগে ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায়ও জড়িত ছিলেন বিদেশি ব্যক্তি।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে রোববার মামলা করার পর পুলিশ জানতে পারে যে গত শুক্রবার রাতে বাড্ডা এলাকার এই ব্যাংকের বুথ থেকেও দুই বিদেশি নাগরিক একটি কার্ড ব্যবহার করে বেশ কয়েকবার টাকা তোলে।
তবে ওই টাকা তোলার কোনো রেকর্ডও ব্যাংকের মূল সার্ভারে লিপিবদ্ধ হয়নি। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখেছে, ওই বুথ থেকে তিন লাখ টাকা খোয়া গেছে।
বাড্ডার ওই বুথের সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, ৩১ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই বিদেশি নাগরিক ওই বুথে ঢোকেন এবং একটি কার্ড ব্যবহার করে বেশ কয়েকবার টাকা তোলেন।
সে সময় বুথের ভেতর নিরাপত্তাকর্মীও উপস্থিতি ছিলেন। টাকা তোলার সময় তারা চোখে সানগ্লাস আর মাথায় ছিল টুপি পরে, মুখ ঢেকে পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে এই জালিয়াতির রহস্য উদ্ঘাটনের আশা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহিদুর।
তিনি বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।”
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, দোভাষী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ডিবি এই চক্রের জাল ছিন্ন করতে কাজ শুরু করছে বলে জানান শাহিদুর।