পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে রায়ের পর এ পর্যন্ত ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নিয়ে রাজউক যতগুলো বোর্ড সভা করেছে তার সবগুলোর সিদ্ধান্তের অনুলিপি চেয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 22 May 2019, 11:08 PM
একই সাথে বন, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, জলাশয় ইত্যাদি স্পষ্ট করে করে চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যান ও প্রস্তাবিত পঞ্চম সংশোধিত লেআউট প্ল্যান আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
একটি আবদনে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসব দাখিল করতে বুধবার রাজউককে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজিব-উল-আলম।
সাঈদ কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সাতটি সংগঠনের দায়ের করা জনস্বার্থের এক মামলায় ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ দেওয়া রায়ে হাই কোর্ট পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র চতুর্থ সংশোধনী লেআউট প্ল্যানের অনুমোদন দেয়।
ওই রায়ে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, আদালতের অনুমতি ছাড়া অনুমোদিত চতুর্থ সংশোধিত লেআইট প্ল্যানে চিহ্নিত বন, লেক, খাল, পার্ক, খেলার মাঠ ও উদ্যান, সবুজ বেষ্টনী ও নগরায়নের জন্য করা সবুজ আচ্ছাদনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না রাজউক।
সাঈদ বলেন, “কিন্তু দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরে উচ্চ আদালতের অনুমোদিত চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন প্লট সৃষ্টির জন্য পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যান অনুমোদনের জন্য আদালতে আবেদন করে রাজউক।
“রাজউকের সেই পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনটি (১০০ তলা বিশিষ্ট ভবন, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো ও রাজউকের কেন্দ্রীয় স্ট্যাকইয়ার্ড) নতুন স্থাপনার জন্য পূর্বাচলের চতুর্থ সংশোধিত প্ল্যানে ২১ রকম ভূমি ব্যবস্থাপনার ২০টিতেই পরিবর্তন আনার প্রস্তার করা হয়েছে।”
এ আইনজীবী বলেন, “শুধু তাই নয় চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খেলার মাঠ (প্রায় ১৪০ একর ) সরিয়ে অন্য জায়গায় বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল রাজউকের প্রস্তাবিত পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যানে। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রাজউকের পঞ্চম সংশোধনী লেআইট প্ল্যানটি কার্যত বাতিল করে দেয়।
“প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে কেবল ১০০ তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে বলে আদেশ দেয় আদালত। সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয় যে চতুর্থ সংশোধনীতে যেখানে বাণিজ্যিক এলাকা দেখানো আছে শুধুমাত্র সেখানেই এ ১০০ তলা ভবনের জন্য অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে খেলার মাঠ, সবুজ বেষ্টনী, জলাশয়সহ অন্য ২০টিরও ভূমি ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।”
হাই কোর্টের এ আদেশের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বনের জায়গা কমিয়ে নতুন প্লট তৈরির অনুরোধ জানিয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে। এছাড়াও আদালতের অনুমোদিত প্ল্যানে ব্যতয় ঘটিয়ে ৮৪টি প্লটও বরাদ্দ দিয়েছে।
মামলাটি চলমান থাকায় (কন্টিনিউয়াস মেন্ডামাস) রাজউকের এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত এপ্রিলে সাতটি সংগঠনের পক্ষে একটি আবেদন করা হয়। তার শুনানি করেই আদালত এ আদেশে দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী সাঈদ।