ঘর-বাড়ির ছাদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উপাসনালয়, জেলখানা, প্রত্মতাত্ত্বিক স্থাপনা ও স্থানসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মোবাইল টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করতে বলেছে হাই কোর্ট।
Published : 25 Apr 2019, 08:35 PM
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসিকে আগামী চার মাসের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তার থেকে কী পরিমাণ বিকিরণ শরীর গ্রহণ করছে (স্পেসিফিক অ্যাবসরপশন রেট বা এসএআর মান) তা নির্ণয় করেও প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিকিরণ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই-রাকিব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।
পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আদালত ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে ওই সব বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে আগামী চার মাসের মধ্যে আদালতে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তার ভাষ্যমতে আদালতের ওই নির্দেশনাগুলো হল-
১. মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার ১০ ভাগের ১ ভাগ করা;
২. মোবাইল টাওয়ার বাসার ছাদ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কারাগার, খেলার মাঠ, জনবসতি এলাকা, হেরিটেজ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে টাওয়ার না বসানো এবং যেগুলো বসানো হয়েছে তা অপসারণ;
৩. বিকিরণ মাত্রা যেন বেশি না হয় সে ব্যাপারে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ;
৪. টাওয়ার বসাতে জমি অধিগ্রহণে কোনো বাধা আছে কি না তা দেখা বা বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ;
৫. টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা বিটিআরসি ও আইটিইউ এবং আইইসি এর মান অনুসারে পরিমাপ করা;
৬. কোনো টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা বেশি হলে তা অপসারণ করে নতুন টাওয়ার বসানো;
৭. টাওয়ার ভেরিফিকেশন মনিটর পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিটিআরসির দায়-দায়িত্ব হবে বাধ্যতামূলক;
৮. বিটিআরসি স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করবে;
৯. বিটিআরসি অন্যদের নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করবে এবং লাইসেন্সধারীদের প্রতি ৬ মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে;
১০. মোবাইল সেটে দৃশ্যমানভাবে এসএআর মান লিখতে হবে;
১১. সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সধারীদের প্রতিটি রিপোর্ট-রেকর্ড ৫ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদালতের আদেশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আরও গবেষণা করে প্রতিবেদন দিতে হবে বলে মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন।
বিটিআরসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশন (আইসিএনআইআরপি) কর্তৃক নির্ধারিত বিকিরণমাত্রা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪ দশমিক ৫ ওয়াট। বাংলাদেশে এর চেয়ে কম রয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে তা দশমিক ৪৫ মাত্রায় আনার নির্দেশনা চান রিটকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এ বিষয়ে আদালতে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, যেসব দেশের ভিত্তিতে এই মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেসব দেশ শীত প্রধান। সেখানে জনবসতি কম। কিন্তু বাংলাদেশ উষ্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ।
এক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায় তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই রায়ের পর আন্তর্জাতিক মাত্রা নির্ধারণের পর ভারত নিজের দেশের প্রেক্ষাপটে মাত্রা নির্ধারণ করেছে।
২০১২ সালে এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের নির্দেশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।
ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ঢাকার মতিঝিল, গুলশান ও মিরপুর এলাকায় ৬টি মোবাইল কোম্পানির ১৮টি টাওয়ারের বিকিরণ সরেজমিন পরিদর্শন করে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তিন দফা সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব টাওয়ারের মধ্যে মাত্র একটি টাওয়ারে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন পাওয়া গেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বিটিআরসি নীতিমালা করে।
পরবর্তীতে আদালতের দেওয়া আদেশের আলোকে আরও কয়েক দফা এই নীতিমালা সংশোধন করে আদালতে দাখিল করে বিটিআরসি।
এই প্রেক্ষাপটে মামলাটি চলমান রেখে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে বলেছে আদালত।