এক বছর আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে কোটি টাকার সোনাসহ দুই ভারতীয়কে আটকের পর শুল্ক কর্তৃপক্ষ যে মামলা করেছিল, তার রায়ে খালাস পেয়েছেন এই দুই বিদেশি।
Published : 26 Feb 2019, 10:46 PM
রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলা আর খামখেয়ালিপনায় মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের এই পরাজয় ঘটেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুবাই থেকে আসা এমিরেটসের ফ্লাইট থেকে নামার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দুই ভারতীয় পাঞ্জাবের পাতিয়ালা জেলার বিবিপুর গ্রামের ঈশ্বর দাস এবং বুধমোর গ্রামের গুরজান্ট সিংকে।
তাদের দেহ তল্লাশি করে দুই কেজি ৬২০ গ্রাম সোনা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে দুজনকে আসামি করে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আলাদা দুটি মামলা করেছিলেন কাস্টমস কর্মকর্তা জিএম আক্তারুজ্জামান।
মামলার এজাহারে আটক সোনার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল।
অভিযোগপত্র, অভিযোগ গঠনের পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত রোববার মামলা দুটির রায় দেন ঢাকা মহানগরীর ৯ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (চতুর্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ) মোহাম্মাদ এরফান উল্লাহ।
রায়ে তিনি দুই আসামিকেই খালাস দেন।
বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীর শরীর থেকে স্বর্ণ জব্দ হওয়ার মামলাগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রায়ে আসামির দণ্ড হয়ে থাকে।
এই মামলায় যে ধারায় অভিযোগ, সেই বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) এর ১(বি) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে আসামির মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডেরি বিধান রয়েছে, শাস্তি কোনো ক্রমেই ২ বছরের কম হবে না।
এই মামলা দুটিতে শাস্তি না হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রসিকিউটর রয়েছেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।”
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী অন্যতম আইনজীবী এপিপি আবদুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিকে এক্সরে পরীক্ষাকারী চিকিৎসক ও হাসপাতালের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়নি। আর বাদী, আইওসহ অন্যরা মামলা প্রমাণে ভালোমতো সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
“আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষীর পরোয়ানাও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি। যে কারণে আসামিরা খালাস পেয়ে গেছে।”
তবে একটি মামলার নথিতে দেখা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তাদের একজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলা দুটি তদন্ত করেছেন বিমানবন্দর থানার এসআই সবুজ রহমান ও মো. শফিউদ্দিন আলম। গত বছরের ১৬ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর অভিযোগ গঠন করে গত বছরের এপ্রিল মাসে শুরু হয় বিচার।
ঈশ্বর দাসের বিরুদ্ধে মামলাটিতে বাদীর পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবুজ রহমানসহ রাষ্ট্রপক্ষে ছয়জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে নথিপত্রে দেখা যায়।
বাদী বিমানবন্দর কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান সাক্ষ্যে বলেছেন, ঘটনার দিন ঈশ্বর দাস শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। তখন তিনি অস্বীকার করার পর তাকে উত্তরার মেডিকেল কলেজ ফর উইম্যান অ্যান্ড হসপিটালের নিয়ে এক্স রে করালে তার পেটের নিচে সোনার বারের উপস্থিতি ধরা পড়ে। পরে তাকে বিমানবন্দরে ফিরিয়ে এনে পায়ুপথ দিয়ে ছয়টি সোনার বার বের করা হয়।
“এ সময় আসামি স্বর্ণের পিসগুলো বের করে, যার ওজন আনুমানিক ১ কেজি ২৯০ গ্রাম। আমি এগুলো জব্দ করি। পরে থানায় তাকে সোপর্দ করি।”
সাক্ষ্য কাস্টমস কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানও একই কথা বলেন।
এই মামলার রায়ের বিষয়ে ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী দুলাল মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ ছিল। তাহলে আসামি খালাস পেত না।”
অবসরপ্রাপ্ত বিচারক (সর্বশেষ বিশেষ জজ হিসাবে ঢাকায় কর্মরত) সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অবহেলা, অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতার নমুনা।”
তিনি বলেন, “ইচ্ছা করলে বিচারক মামলাটি পুনঃতদন্তেও পাঠাতে পারতেন। এ মামলার বিচারে দারুণ অসঙ্গতি রয়েছে। স্পর্শকাতর সোনা চোরাচালান মামলার এ রকম বিচার আমরা আশা করি না।”