আন্দোলনের জের ধরে নিরাপরাধ পোশাক শ্রমিকদের যাতে হয়রানি করা না হয় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান।
Published : 17 Jan 2019, 03:36 PM
গার্মেন্ট শ্রমিকদের এই অসন্তোষের পেছনে গত বছর ঘোষিত মজুরি কাঠামো বর্তমান ‘বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার’ কথা বলেছেন তিনি।
মজুরি কাঠামো প্রণয়নের সময় মন্ত্রী থাকা শাজাহান খান বলেছেন, শ্রমিকদের মতামতকে বিবেচনায় না নিয়ে মালিকপক্ষ সরকারকে দিয়ে ওই মজুরি নির্ধারণ করিয়েছিল।
ভবিষতে এই শিল্পে যে কোনো শ্রম অসন্তোষ দেখা দিলে শক্তি প্রয়োগ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে সব মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে ‘তৈরী পোশাক শিল্পের বিরাজমান পরিস্থিতি ও করণীয় শীর্ষক’ গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান।
তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয় সেখানে।
ওই মজুরি কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও আশপাশের গার্মেন্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ দেখায় পোশাক শ্রমিকরা। অনেক কারখানায় নির্ধারিত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে মজুরি কাঠামো পুনঃমূল্যায়নে গত ৯ জানুয়ারি শ্রম সচিবকে প্রধান করে ১২ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা কমিটি করে দেয় সরকার। এরপর এ কমিটির সিদ্ধান্তে ১৩ জানুয়ারি ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে মোট বেতন ১৫ টাকা থেকে ৭৮৬ টাকা বাড়িয়ে সর্বশেষ মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়।
এরপর শ্রমিকরা কারখানায় ফিরলেও বিক্ষোভে উসকানি এবং ভাংচুর-লুটপাটসহ নানা অভিযোগে মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আন্দোলনের পর নিরাপরাধ শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “আমরা দাবি করছি, নিরপরাধ কোনো শ্রমিক যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং কোনো নিরপরাধ শ্রমিক ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হলে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।”
মজুরি কাঠামোর অসঙ্গতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “শ্রমিকরা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির ফলে যে মোট মজুরি পান অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম মজুরি নির্ধারিত হয়েছিল, যা শ্রম অসন্তোষের কারণ হিসেবে শ্রমিকসহ সকল মহল মনে করছেন।”
শ্রমিকদের মতামতকে বিবেচনায় না নিয়ে মালিকপক্ষ সরকারকে দিয়ে ওই মজুরি নির্ধারণ করিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এরপরেও শ্রমিক অসন্তোষে ‘কুচক্রি মহলের’ হাত ছিল বলে মনে করেন শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “আমরা গভীরভাবে লক্ষ করছি যে, গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির কুচক্রী মহল গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ায়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা এ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে তারা রাস্তায় নামে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এতে করে শিল্পের উৎপাদন ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়।”
পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনাদের কারখানায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিক বা লিখিতভাবে অবহিত করবেন। আর মালিক পক্ষকে আহ্বান জানাই, তারা যেন শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, কোনো শ্রমিক যাতে হয়রানির শিকার না হয়। কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা অংশগ্রহণমূলক কমিটি কার্যকর থাকলে এই ধরনের অনেক সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শ্রমিক নেতা ওসমান গনি ও আবুল হোসাইনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।