নয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিআরটিসির জোয়ার সাহারা ডিপোতে তালা ঝুলিয়ে দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চালক ও শ্রমিকরা।
Published : 08 Jan 2019, 06:23 PM
মঙ্গলবার ভোর থেকে এই বিক্ষোভ চলার পর বিকালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া ডিপোতে গিয়ে তিন মাসের মধ্যে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও অচলাবস্থা কাটেনি। বুধবারও কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন চালকরা।
বিআরটিসির জোয়ারসাহারা ডিপোতে একতলা, দ্বিতল এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ে ১২০টি সচল বাস রয়েছে। এসব যানবাহনের আয় থেকেই কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লোকসানের কারণে প্রায় ৫০০ কর্মীর বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
সেই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার ভোরে জোয়ারসাহারা ডিপোর প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন চালক ও শ্রমিকরা। দিনভর বিক্ষোভে বেতন নিয়মিত করার পাশাপাশি বিআরটিসিকে রাষ্ট্রীয়করণসহ নানা দাবিতে শ্লোগান দেন তারা।
এ ডিপো থেকে টঙ্গী-মতিঝিল, আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল, কুড়িল বিশ্বরোড-পাঁচদোনা রুটের একতলা ও দ্বিতল বাস চলাচল করে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস হিসেবে এ ডিপোর বাস চলাচল করে। ধর্মঘটের কারণে সারা দিন কোনো বাস ডিপো ছেড়ে যায়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ব্যবস্থাপক মো. নূর-ই-আলম।
আবুল হোসেন নামে আন্দোলনকারীদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের নয় মাসের বেতন বকেয়া। এ অবস্থায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা প্রতিদিন কথা শোনায়। বছরের শুরুতে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি চলছে। কিন্তু অনেকেই বেতন দিতে পারেনি। এইভাবে আর চলে না।”
“কোনো কারণে গাড়ি নষ্ট হলে, ইঞ্জিন বিকল হলে, চাকা ফেটে গেলে সব ব্যাপারে আমাদের বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা হয়। একটা আচড় লাগলেও টাকা কাটে। আমাদের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখার পর সেই খরচের জন্য আবার অফিস থেকে বিল করে। গাড়ির কাগজপত্র না থাকার মামলা হলেও আমাদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেয়। আমরা কয় টাকা বেতন পাই, তার থেকে আবার কেটেও নেয়?”
বিআরটিসির চালকদের বেতন সরকারের রাজস্ব খাত থেকে দেওয়ার দাবি জানান সোহরাব নামে আরেক চালক।
“বেশিরভাগ ডিপোর বেতন মাসের পর মাস বন্ধ। অথচ হেড অফিসের কর্মীদের বেতন মাসের ১ তারিখে হয়ে যায়। একই সংস্থায় দুই রকম আইন চলতেছে। এভাবে চলতে পারে না।”
ধর্মঘটের খবর পেয়ে বিআরটিসির পরিচালক (অর্থ) ড. নাসিম হোসাইন এবং পরিচালক (কারিগরি) মাহবুবুর রহমান সকালে জোয়ার সাহারা ডিপোতে যান। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা শেষে ডিপোর ব্যবস্থাপক নূর ই আলম বেলা ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বেলা দেড়টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ‘চেষ্টা করছেন’ তারা। এরপরও তারা কর্মবিরতি চালিয়ে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।
"গত সাত আট মাস ধরে নিয়মিত বেতন হচ্ছে। তারপরও সাত-আটটা লোক সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এগুলো করছে।"
পরে বেলা ৩টার দিকে জোয়ারসাহারা ডিপোতে যান বিআরটিসির চেয়ারম্যান। আগামী তিন মাসের মধ্যে বেতন নিয়মিত করার আশ্বাস দেন তিনি।
বকেয়া বেতনের দাবিতে গতবছর জুলাই মাসেও একবার আন্দোলনে নেমেছিলেন জোয়ার সাহারা ডিপোর বাস চালকরা। তখন তাদের ১০ মাসের বেতন বকেয়া ছিল।
সারাদেশে বিআরটিসির ২২টি ডিপো আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ডিপো আছে ছয়টি। এসব ডিপোতে প্রায় তিন হাজার চালক, টেকনিশিয়ান, অফিস সহকারী এবং নিরাপত্তারক্ষী কাজ করেন। সরকারি বেতন স্কেলে তারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
জোয়ার সাহারার মত ঢাকার অন্যান্য ডিপোতেও কর্মীদের বেতন কমবেশি বকেয়া রয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।