ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধুমাত্র সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয়, সব নাগরিকের মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকারের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে মত এসেছেন একটি আলোচনা সভায়।
Published : 28 Oct 2018, 12:47 AM
আইনটির আপত্তিকর ধারাগুলো সংশোধন করা না হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত বলে মত দিয়েছেন বক্তারা।
শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ‘মুক্ত গণমাধ্যম: প্রেক্ষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, “আইনটি ভাল করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে কাউকে যে কোনো অবস্থায় আইনটির অধীনে ফেলে দেওয়া যাবে। ১৯৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের থেকেও এ আইনটি ভয়ানক! এই আইনের অবশ্যই সংশোধন হওয়া দরকার।”
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘আমাদের সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তৃতীয় একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল বৈঠকটি হওয়ার আগেই আইনটি পাস হয়ে গেল। এতে আমাদের উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে।
“এ আইনে আমরা মাত্র ৯টি ধারার বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। আমরা কিন্তু পুরো আইনকে প্রত্যাখ্যান করিনি। আইনটিকে আমরা ফেলেও দেইনি। আমরা শুধু বলেছি এই ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। কোথায় পরিপন্থী তা আমরা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছি।
“এ আইনটি শুধুমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্যই নয়, সকল নাগরিকের জন্যই উদ্বেগের।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, একটি আইন কতটা ভাল বা দুর্বল তা বোঝা যায় আইনটির প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ দেখে। ইতিমধ্যে এই আইনের পূর্ববর্তী আইনটির থেকে (৫৭ ধারা) অপপ্রয়োগ শুরু হয়ে আসছে।
“এই আইনের অপরাধের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা আছে; যা ইচ্ছামত ব্যাখা ও অপপ্রয়োগ করা সম্ভব। এই আইনে ‘গুজব’, ‘ভাবমূর্তি’, ‘মূল্যবোধ’ ও ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ এই শব্দগুলো রাখা হয়েছে। কিন্তু এই শব্দগুলোর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি।’”
তিনি বলেন, এই আইনের দ্বারা কোনো সংস্থাকে যদি অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হয় তখন সেটি অবশ্যই কালো আইন।
“এই আইনের অধীনে পুলিশের ক্ষেত্রে তল্লাশি, জব্দ, ঘরে প্রবেশ, গ্রেপ্তারসহ বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে অবাধ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।”
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তথ্য, আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের এই উদ্বেগের জায়গাগুলোয় সংশোধনী আনা হবে এবং আইনটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংশোধনী হবে। কিন্তু আইনমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন, তিনি কথা রাখেননি।
“এই একটি জায়গায় আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ঘণীভূত হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই সংশোধন ছাড়া আইনটি বাস্তবায়ন বা কার্যকর হোক তা সাংবাদিক সমাজ থেকে আমরা মেনে নিতে পারি না।”
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “সকলেই যদি মনে করি আইনটি সবার স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে হয়নি, তবে আইনটি অবশ্যই সংশোধন করা যাবে। আইনটি কোন বাইবেল নয় যে সংশোধন বা বাতিল করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই বাস্তাবায়ন করবেন।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।
ল’রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদ।