কাজ ও কলেবর অনেক বেড়ে যাওয়ায় সশস্ত্র বাহিনীর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগটিকে এখন ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
Published : 06 Aug 2018, 07:14 PM
এই সময়ের বাস্তবতায় সোশাল মিডিয়াতেও সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতির পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।
এতে সশস্ত্র বাহিনী ও গণমাধ্যমের দূরত্ব কমে আসার পাশাপাশি গুজবের মতো ঘটনা মোকাবেলা সহজ হবে বলে মত তৌফিক খালিদীর।
ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সমন্বিত উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে সেনাবাহিনীর আয়োজনে সোমবার এক প্রশিক্ষণে বক্তব্য দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি বলেন, এখনকার আইএসপিআরের পরিবর্তে মেজর জেনারেল বা সমমর্যাদার একজন কর্মকর্তার সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র হওয়া উচিৎ।
“এক সময় এক বা দুজন মেজর জেনারেল দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী চলত, কিন্তু এখন আমাদের দুই তারকার কর্মকর্তাই আছে পঞ্চাশের বেশি।
“সেনাবাহিনী আকারে বেড়েছে, ৪০ বছর আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি ডিভিশন রয়েছে, বেড়েছে কাজের পরিধিও; নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলায়।”
দীর্ঘদিন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে কাজ করে আসা তৌফিক খালিদী বলেন, অন্যান্য দেশে জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র হয়ে থাকেন, যার সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে কথা বলার মতো যথেষ্ট কর্তৃত্ব থাকে।
গণমাধ্যম ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব কমানো নিয়ে এক সেনা কর্মকর্তা প্রশ্নের জবাবে একথা বলছিলেন তৌফিক খালিদী।
আলোচনায় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য নিবেদিত সাংবাদিক না থাকার কথাও আসে।
তৌফিক খালিদী বলেন, “এটা সত্য যে আমাদের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে একজন নিবেদিত প্রতিরক্ষা প্রতিবেদক নেই। যেমনটি কূটনীতি, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, সংসদের মত বহু ইস্যুর জন্য রয়েছে।”
এই দূরত্ব ঘোচাতে উভয় পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সঙ্কটকালে গুজব মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেইসবুক ও টুইটার একাউন্ট খোলার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের সম্পাদক।
তিনি বলেন, “আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি এজেন্সিগুলোর শক্তিশালী উপস্থিতি চাইব। এটা সবার সঙ্গে সরাসরি, দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব করে। আমরা জানি, তাদের ওয়েবসাইট রয়েছে; কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আন্তঃযোগাযোগ সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
“গুজব কারবারিদের মোকাবেলায় এটা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। কেননা যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো ধরনের ব্যর্থতা কিছু সংখ্যক মানুষকে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। তখন তাদের প্রতিপক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করতে পারে; এমনকি তা যদি আরও জনদুর্ভোগ ডেকে আনে, তাতেও।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সংগঠিত ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীকে যথাযথভাবেই দুর্যোগ মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে।
“আমার সুপারিশ হচ্ছে, সেনাবাহিনীর একটা ফেইসবুক পেজ বা টুইটার একাউন্ট খোলা উচিত, এগুলোকে ভেরিফাইড করা উচিৎ, যাতে গুজব কারবারিদের আটকানো যায়, বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সঙ্কটকালে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।”
দুর্যোগ মোকাবেলায় দায়িত্বশীলদের গণমাধ্যম এবং এর দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূমিকা, এর সীমা এবং কাজের ধরণ বোঝার উপরও গুরুত্ব দেন সাংবাদিক তৌফিক খালিদী।
আর এজন্য পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্য আলোচক ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. ইমদাদ-উল-বারী মিডিয়া স্টাডিজের অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোর্স চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ভূমিকম্প পরবর্তী সমন্বিত উদ্ধার তৎপরতার ওপর অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে রোববার শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড ও আর্মি ওয়ার গেম সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম ভূমিকম্পের ওপর কম্পিউটারভিত্তিক প্রশিক্ষণ।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে ‘গণমাধ্যম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত সরকারি নীতি: ধারণা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির ও সাবেক সচিব মিকাইল শিপারও আলোচনা করেন।