কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা রাশেদ খানের মা সালেহা আক্তার বলেছেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে আন্দোলন করার অভিযোগ তোলা হয়েছে, যা মোটেও ঠিক নয়।
Published : 14 Jul 2018, 09:11 PM
ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ‘জড়িত নয়’ দাবি করে তার কারামুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ রেখেছেন তিনি।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও তাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে কথা বলেন সালমা আক্তার।
‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার: কোন পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই সভায় অন্যদের মধ্যে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী রফিক আহমেদ সিরাজী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, অধ্যাপক আমেনা মহসীন, নারীনেত্রী অধ্যাপক মালেকা বেগম, শিক্ষা বার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা, রেজওয়ানুর রহমান লেনিন, রেশাদ ফরাজী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুবনা জেবিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব হোসেন ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার বক্তব্য রাখেন।
সভায় কারাবন্দি রাশেদের মায়ের সঙ্গে তার স্ত্রী রাবেয়া আলো ও বোন সোনিয়া আক্তারও ছিলেন।
“আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ জানাই, মামলা তুইলা নিয়া আমার মনিরে আমার কাছে ফিরায়া দেন। সে কখনও কোনোদিন কোনো রাজনীতির দল করে নাই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিল একদল শিক্ষার্থী। তাদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ‘ঘোষণা’ দেন এবং পরে বিষয়টি পর্যালোচনায় একটি কমিটিও করা হয়।
এরপরও কর্মসূচি পালন গিয়ে গত মাসের শেষ দিন ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরই একজন ঝিনাইদহের রাশেদ খান, গত ১ জুলাই মিরপুরের ভাষাণটেক এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে শাহবাগ থানায় এক ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রিমান্ডেও পায় পুলিশ।
রাশেদসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার সমালোচনা করে অধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, “শিক্ষার্থীদের বক্তব্য যখন কেউ শুনছে না, যখন তাদের অধিকারের দাবির ফয়সালা হচ্ছে না, তখন তারা রাস্তায় নেমে আসছে। সেটা আইনের পরিপন্থি নয়। সংবিধানে নাগরিকদের অভিন্ন অধিকারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
“কিছু মানুষের অধিকার আছে, কিছু মানুষের অধিকার নেই। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। এখন যা চলছে, তা কোনোভাবেই সভ্য ও গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ নয়।”
কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিলে সরকারেরর ‘গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গোলটেবিল আলোচনায় আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন আইনজীবী রফিক আহমেদ সিরাজী।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার সমালোচনা করে ব্যারিস্টার সারা হোসেন অভিযোগ করেন, “নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে সংবিধানের ২৭ থেকে ৩৫ ধারার কোনোটি সরকার মানছে না।”
তিনি বলেন, “আইনে সবার সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারা নিজেরাই সেটার উল্টো প্রয়োগ করছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ পি এম সুহেলকে সম্প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও কৃষক সমিতির নেতা লাকী আক্তারের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাকী আক্তারকে কটাক্ষ করে অশালীন মন্তব্যের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সভায় এ ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
লাকী আক্তার বলেন, “আজকে এই আন্দোলনকে নানা ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। একে বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে রাজাকারদের আন্দোলন। আজকে দমন-পীড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে সরকার।”
সুহেলের বিষয়ে তথ্য নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার পরিবারকে নানাভাবে ‘হেনস্তা’ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।