শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন দল দাবি তোলার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিকে ভাবমূর্তি সঙ্কটে ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আচরণ বিধিমালা-২০১৬ সংশোধনের প্রস্তাব বৃহস্পতিবার অনুমোদন দিয়েছে ইসি। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর তার গেজেট প্রকাশ হবে।
বর্তমান আচরণ বিধিতে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নামার সুযোগ না থাকায় আওয়ামী লীগ এই আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি তুলেছিল।
ক্ষমতাসীনরা বলছিল, তাদের সংসদ সদস্যরা সিটি নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ না পেলেও বিএনপি সংসদে না থাকায় সে দলের নেতারা প্রচারে নামতে পারছে, এতে সবার সমান সুযোগ থাকছে না।
‘স্টেকহোল্ডার হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আচরণ বিধি সংশোধনীর এই সিদ্ধান্ত বলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন।
সংসদ নির্বাচনের বছর যখন ইসির নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইছে, তখন এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হবে বলে বিশ্লেষকদের মত।
বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি করপোরেশনের আচরণবিধির এমন সংশোধনী ইসির ভাবমূর্তি সঙ্কট আরও ঘনীভূত করবে।
“খুলনা সিটি নির্বাচনে গণগ্রেপ্তারে নীরব ভূমিকা, ভোটের দিন পুলিশের ওপর কন্ট্রোল না থাকা- এসব নিয়ে ইসিকে প্রশ্নের সম্মুখে পড়তে হয়েছে। এ মুহূর্তে ইসির সিদ্ধান্তে জনমনে আরও প্রশ্ন ও সন্দেহ বাড়াবে; নিরপেক্ষতার সঙ্কটও তৈরি করবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অন্য দেশেও সংসদ সদস্যদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ থাকার কথা বলেছিলেন।
অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, “কিন্তু তাদের নির্বাচনী কালচার আর বাংলাদেশের কালচার এক নয়। এখানকার সাংসদরা স্থানীয় উন্নয়ন ও প্রশাসনে সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে তাদের দূরে রাখাই ভালো।”
সংসদ সদস্যদের প্রচারের বাইরে রেখে যে ইসি আচরণবিধি করেছিল, তখনকার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগে সব দল ও অংশীজনের মতামত নিয়ে আচরণ বিধি করা হল; অফিস অব প্রফিট পর্যালোচনা করে সংসদ সদস্যদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া হয়নি, যাতে ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকে নির্বাচনে।
“সংসদ সদস্য তো লোকাল অ্যাডমিনস্ট্রেশন হয়ে যায়। বড় দুই দল বাদই দিলাম; ভোটে অনেক ছোট ছোট দলও থাকে। যেসব এলাকায় দলীয় সাংসদ থাকে না; তাদের প্রার্থীদের কাছে এটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে।”
তিনি বলেন, “এটা (সংসদ সদস্যদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ) কোনোভাবেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। এটাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিঘ্ন হল।
“এর মাধ্যমে জটিলতা বাড়বে, ইসির কন্ট্রোল আরও শিথিল হবে। অভিযোগ, বাদানুবাদ বাড়বে বহু গুণে। সার্বিক পরিস্থিতি হ্যান্ডল করা মুশকিল হয়ে যাবে; ইসির ভাবমূর্তিও সঙ্কটে পড়বে।”
“এমন সময়ে এ আচরণবিধি সংশোধন করা হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ বাড়বে,” বলেন সাবেক কমিশনার সাখাওয়াত।
সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর একটি জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে। নতুন করে সংশোধনী এনে সাংসদদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে বৈষম্য বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন কখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপক্ষো করতে পারবে না।”
এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি পৌর আচরণবিধিতে এমপি-মন্ত্রীদের প্রচারের সুযোগ রেখে সংশোধনী প্রস্তাব করে। তা নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় তাদের।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে গেলে ইসিকে দেখতে হবে বিতর্কহীন আচরণ বিধি প্রণয়ণের।
“সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। সেক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকতে ইসির যথাযথ ভূমিকা রাখতে কী করা উচিৎ, তা এখন সাংবিধানিক সংস্থাটিকেই ভাবতে হবে।”