আ. লীগের চাপে নয়, বাস্তবতা বিবেচনায় বিধি সংশোধন: ইসি সচিব

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে নামার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2018, 07:44 PM
Updated : 19 April 2018, 07:50 PM

বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় ওই সিদ্ধান্তের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের চাপে নয়, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আচরণবিধি হালনাগাদ করার জন্য এ সংশোধন আনা হচ্ছে।

বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬’ সংশোধন নিয়ে ওই বৈঠক হয়।

সেখানে আচরণ বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য ইসির আইন সংস্কার কমিটিকে দ্রুত সময়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকের পর ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, বিধি সংশোধন হলে আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা তার সুবিধা পাবেন কি না তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।

“আসন্ন নির্বাচনে ইমপ্লিমেন্ট হতেও পারে; নাও হতে পারে।”

২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন।

প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে বিধির খসড়া তৈরি হয়। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-সাংসদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়। এ নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষোভ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গেল সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংসদ সদস্যদের ভোটের প্রচারে নামার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

তবে সাংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিটি ভোটে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন করে সংশোধনী এনে সাংসদদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে বৈষম্য বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন কখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপেক্ষা করতে পারবে না। বিশেষ দল যেন সুবিধা না পায় সেটা দেখতে হবে।”

ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পেলে অন্য প্রার্থীরা সুযোগ বঞ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এরপর নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আচরণ বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত এলো।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সিটি করপোরেশনের আচরণবিধিমালা পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, অতি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ কারা কারা। সিটি একটা বড় এলাকা। পৌরসভা, ইউপি ছোট এলাকা। সংসদ সদস্যরা সিটি এলাকায় বসবাস করে থাকেন। যাওয়া আসা করে থাকেন।

“স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের তফসিল হলে পরে তাদের যাওয়া-আসাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আইনে বলা আছে, শুধুমাত্র ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয়। সেদিক বিবেচনা করে আলোচনাটা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সংসদ সদস্যরা কোনো অফিস হোল্ড করেন না। উনারা কোনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। তারা কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না বা সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না-এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

হলফনামা নিরীক্ষা করবে না ইসি

হলফনামার তথ্য নিয়ে নানা অভিযোগ করছেন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা। তবে হলফনামায় কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ে যাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।

ইসি সচিব বলেন, “হলফনামা যখন প্রার্থী দেন, একজন এফিডেভিট দেন, এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যখন উনি এফিডেভিট করেন, এটার দায়িত্ব তখন তার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ ইসির থাকে না।”

বাগেরহাট শূন্য আসনে ভোট জুনের শেষে

মেয়র প্রার্থী হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেকের ছেড়ে দেওয়া বাগেরহাট-৩ আসনে উপনির্বাচন জুনের শেষ সময়ে করতে চায় কমিশন।

কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব জানান, মে মাসে এ আসনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে জুনের শেষ সপ্তাহে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভোট করা হবে। আগামী কমিশন সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।