ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন ছাত্রীকে গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় রোকেয়া হলের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছেন চার শিক্ষার্থী।
Published : 21 Apr 2018, 12:25 AM
রোকেয়া হলের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘র্যাগ ডে’ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বক্তব্য দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তার গাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানান তারা ৷
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তখন৷
শিক্ষার্থীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘রাতের আধারে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ক্যাম্পাস কোন গ্যাস চেম্বার নয়, পুলিশ মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘সুফিয়া কামালের মেয়েদের বের করা হলো কেন?’, ‘গেস্টরুম নির্যাতন বন্ধ কর’।
মৌন প্রতিবাদ জানানো এই শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যপস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী শ্রবণা শফিক দীপ্তি, ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী তানজিনা তানজি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের জয়ন্তী রায়না ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিন সাথী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়েরর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী দীপ্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুফিয়া কামালের প্রভোস্ট ম্যাম যে গভীর রাতে মেয়েদের হল থেকে বের করে দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে এবং ক্যাম্পাসে গত ৮ এপ্রিল পুলিশি ও বহিরাগত হামলার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনার তদন্তে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর এক পর্যায়ে রাত ১০টা থেকে ১টার মধ্যে ওই হলের তিন ছাত্রীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়া হয়। আরেক ছাত্রীর অভিভাবক এলেও গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে হলে রাখা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যারা সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাদের ডেকে ডেকে ‘তদন্তের নামে হয়রানি’ করছে হল কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ফেইসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য ও অপতথ্য ছড়ানোর কারণে’ তিন ছাত্রীর বিরুদ্ধে ওই ব্যবস্থা নিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করে সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
রোকেয়া হলের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উপাচার্য ‘ভুল ব্যাখা’ দিয়েছেন অভিযোগ করে দীপ্তি বলেন, “সেজন্য বক্তব্য শেষে আমরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভিসি স্যার এবং প্রভোস্ট ম্যামের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছি। স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে ‘কিছু না বলেই’ গাড়িতে উঠে যান।”
প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করা আরেক শিক্ষার্থী জয়ন্তী রায়না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো বিষয়ে আন্দোলন করার অধিকার তো সবার আছে। সুফিয়া কামালের মেয়েরা আন্দোলনে এসেছে বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে এটাতে প্রশাসন যেরকম আচরণ করছে তা খুবই অন্যায্য আচরণ। আমরা সেজন্যই স্যারের বক্তব্য শেষে প্রতিবাদ জানিয়েছি।”