কারাগারে অসুস্থ খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কী সমস্যা পেয়েছেন বা কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Published : 02 Apr 2018, 12:56 PM
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. শাহ আলম তালুকদার সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন বা কোনো তথ্য তাদের জানায়নি।
দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার দল বিএনপির উদ্বেগের মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শনিবার ওই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামসুজ্জামান নেতৃত্বাধীন এ বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।
বোর্ডের সদস্যরা রোববার কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসার পর অধ্যাপক শামসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন “উনার চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করছেন। আজ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর নতুন করে কিছু ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে। আর কিছু বিষয় পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যাগুলো কী- জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, “একজন রোগীর রোগের বিষয়টি একান্ত তার। সে বিষয়ে জানানো ঠিক নয়।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ এবং পরবর্তী করণীয় সোমবার কারা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। তারাই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে থাকায় তার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এসেছেন ব্রিফ করতে। কিন্তু সেই ব্রিফিংয়ে নতুন কোনো তথ্য উপ পরিচালক দিতে পারেননি।
ডা. শাহ আলম বলেন, “মেডিকেল টিম এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন বা তথ্য আমাদের পরিচালককে দেননি। ফলে উনার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যগত অবস্থা কী, আদৌ কোনো পরীক্ষা তার লাগবে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন বা নতুন কোনো তথ্য পেয়ে তা কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে জানিয়ে উপ পরিচালক বলেন, “উনি আমাদের রোগী নন। আমাদের হাসপাতালে ভর্তি নন। এ কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলফল কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। ওখান থেকেই আপনারা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।”
এদিকে উপ-পরিচালকের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর কয়েকজন সাংবাদিক মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শামসুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে তা ‘গুরুতর নয়’।
“তিনি জানিয়েছেন, তার ঘাড়ে ব্যথা, বাম হাতে-পায়ে এবং কোমরে ব্যথা বোধ করেন। এছাড়া তার বাম হাত ঝিম ঝিম করে।”
নিয়মিত যে ওষুধ সেবন করেন, তার সঙ্গে আরও কিছু ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “রক্ত পরীক্ষা এবং এক্সরে করার পরামর্শ দেওয়ার পাশপাশি নিয়মিত ব্যয়াম করার জন্য তাকে বলা হয়েছে।”
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে এখন তিনিই একমাত্র বন্দি।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও আপিল বিভাগ ওই আদেশ ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে সে পর্যন্ত তার মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বন্দি খালেদার সাক্ষাৎ স্থগিত করা হয় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সেদিন বলেছিলেন, তাদের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার জন্য মহাসচিব রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ জানায় যে খালেদা অসুস্থ থাকায় সাক্ষাৎ স্থগিত করা হয়েছে।
এরপর সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল তার নেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুচিকিৎসার জন্য তার মুক্তি দাবি করেন।
তবে কারা কর্তৃপক্ষের কেউ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে তখন সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি।
বিএনপির উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (খালেদা) আগে যেমন ছিলেন তেমনই আছেন।”