এরা তো ধর্মান্ধ হয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে তার সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2018, 08:08 AM
Updated : 4 March 2018, 02:57 PM

রোববার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায়, এরা তো ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে করে একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে।

“তারা কোনোদিন বেহেশতে যাবে না, তারা দোযখের আগুনে পুড়বে। কারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।”

শনিবার বিকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে এক তরুণ ছুরি নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়।

মাথা, পিঠ ও হাতে জখম নিয়ে জনপ্রিয় এই লেখক বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ জাফর ইকবাল বিভিন্ন সময়ে হুমকি পাওয়ায় ২০১৬ সালে তার পাহারায় পুলিশ দিয়েছিল সরকার। পুলিশি পাহারার মধ্যেই শনিবার তিনি আক্রান্ত হন।

হামলার পরপরই ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল নামের এক তরুণকে ধরে ফেলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নিজেকে একটি মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে পরিচয়দানকারী ওই তরুণ র‌্যাবকে বলেছে, জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’। তাই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সে হামলা করে।

ওসমানী মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শনিবার হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিমান বাহিনীকে বলে জাফর ইকবালকে ঢাকা সিএমএইচে আনার ব্যবস্থা করেন।

শনিবার যা ঘটেছে তাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার অবস্থা এখন স্টেবল, অনেকটা ভালো।”

“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে কোনো রকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চলতে দেব না। মাদকের বিরুদ্ধেও কিন্তু আমরা অভিযান চালাচ্ছি।”

তারপরও জাফর ইকবালের ওপর যে আঘাত এল, তার পেছনে কারা রয়েছে- সেই প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, “এখানে বোঝা যাচ্ছে যে তারা পেছন দিক থেকে আঘাত করছে।”

ধর্মান্ধতার ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “এ ধরনের সর্বনাশা পথে যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা না যায়, সেদিকে বিশেষভাবে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”

শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে সবাইকে মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং ছেলেমেয়েদের ওই পথ থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, কী করছে- প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের যাতে দূরত্ব না হয়, সেজন্য সহনশীল আচরণ করতে হবে, সন্তানদের মনোভাব তাদের বুঝতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ও বিশেষ গবেষণা অনুদান দেন।

বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল ও কলেজেই শিক্ষার্থীদের মূল শিক্ষাটা দিতে হবে। সেজন্য প্রতিটি উপজেলার সরকারি স্কুল করে দেওয়া হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হচ্ছে।

তিন বলেন, “আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলব। শিক্ষার জন্য যত রকম সহযোগিতা দরকার, আমরা করব।

অন্যদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।