প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ‘সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেওয়া হয়েছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
Published : 01 Feb 2018, 01:43 PM
বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দিন ঢাকার একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যদি প্রশ্ন ফাঁস হইছে এমন কোনো প্রমাণ হয়, আমরা সেই পরীক্ষা বাতিল করে দিব, কোনো দ্বিরুক্তি হবে না।
“কিন্তু আপনারা বুঝেন, ফেইসবুকে এমন ভুয়া ঘোষণাও আসে, আউট হয়ে গেছে। সাড়ে ২০ লাখ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা আবার নেওয়া, তাদের দুঃশ্চিন্তার বিষয় চিন্তা করেন। এ কারণে যদি প্রমাণ হয়, ফাঁস হয়েছে, তাহলে আমরা পরীক্ষা বাতিল করে দেব, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে কোনো পরীক্ষা হবে না।”
সকালে পরীক্ষা শুরুর আগেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি ল্যাবরেটরি বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে যান নাহিদ। তিনি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র খুলে পরীক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দিক থেকে আমরা এই প্রস্তুতি সারাদেশে নিয়েছি, সব দিক থেকে তৎপর ছিলাম। কতো কী করা যায়…।
“আমি শুধু একটা কথা বলতে পারি, মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব, হিউম্যানলি যা পসিবল তা আমরা করার চেষ্টা করেছি, যাতে পরীক্ষাগুলো নিরাপদে, শান্তিপূর্ণভাবে, নকলমুক্তভাবে এবং প্রশ্নফাঁস না হয়ে হতে পারে। হেন ব্যবস্থা নেই, যেটা আমরা নিই নাই।”
প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের তিনি হুঁশিয়ার করেন- “আমরা খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছি। আমি দুটো শব্দ ব্যবহার করেছি। আমরা খুবই ডেসপারেট, খুবই অ্যাগ্রেসিভ এ বিষয়ে। এবং যদি কোথাও কেউ কোনভাবে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করে তিনি কোনভাবেই রেহাই পাবেন না। কী হবে, আমিও সেটা ধারণা করতে পারি না। চরম একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার এসএসসিতে আধা পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের হলে বসার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। ওই সময়ে সিল ভেঙে খাম খুলে তারপর শুরু হয় প্রশ্নপত্র বিতরণ।
মন্ত্রী জানান, আধা ঘণ্টার আগে কোথাও প্রশ্নপত্রের খাম খোলা হয়েছে কি-না, তা দেখতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে টিম পাঠানো হয়েছে।
“আমাদের সন্দেহ ছিল, ছেলেমেয়েরা আগে আসতে পারবে কি-না… আমরা দেখতে পেরেছি, কেউ দেরি করেনি। আমরা বলেছি, প্রশ্নের খামটা ত্রিশ মিনিটের বেশি আগে খোলা যাবে না। আরও ব্যবস্থা নিয়েছি, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখছি, সারাদেশে শিক্ষা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসন তৎপর রয়েছে।”
অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা দেশ পরিচালনা করবে ভবিষ্যতে, তাদেরকে এমন একটি অনৈতিক কাজের মধ্যে জড়িয়ে ফেলা দুঃখজনক হবে। যারাই হোক, কেউ অপরাধী হলে, সেও যেন এ কাজ থেকে বিরত থাকে। অনেক জায়গা আছে সেখানে করুন, এখানে অন্তত করবেন না। কারণ এখানে শিক্ষার্থীর সুদূরপ্রসারী জীবনের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
ফেইসবুক গ্রুপে আসা একটি ‘প্রশ্নপত্র’ শিক্ষামন্ত্রীকে দেখিয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, ওই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে।
“প্রশ্ন আউট হয়েছে বলে যে প্রমাণ আমাদেরকে দেখানো হয়েছে, মূল প্রশ্নের সঙ্গে আমরা সেটা মিলিয়ে দেখেছি। মিলিয়ে দেখলাম, এই প্রশ্নের সঙ্গে সেটার মিল নাই। গুজব কি-গুজব না, সেটা আপনারা দেখবেন।”
‘মিথ্যা ছড়িয়ে’ কেউ যেন বিভ্রান্ত না করে- সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা ঘিরে বিএনপি আন্দোলনে গেলে এসএসসি পরীক্ষায় জটিলতা সৃষ্টি হবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “যারাই হোন, এমন কিছু করবেন না, যাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্ষতি হয়। তবে আমরা আগেও এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা নিতে পেরেছি। তবে অনেক কষ্ট হয়েছে, শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয়েছে।”