চলমান বন্যায় দুই সপ্তাহে দেশের ৩২ জেলার প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
Published : 23 Aug 2017, 04:43 PM
এতদিন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সরবরাহ করলেও এবারই প্রথম দুই দপ্তর বন্যার ক্ষতি নিয়ে একই রকম তথ্য দিল।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) উপ সচিব জি এম আব্দুল কাদের জানান, বন্যায় ৩২ জেলায় এ পর্যন্ত ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের।
অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এই দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি
>> দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলায় ২০১টি উপজেলা ও ৫১টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে।
>> ২ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৯ জন এ বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। আরও ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
>> বন্যায় ৭৫ হাজার ৩৩১টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
>> কুড়িগ্রামে ২৩ জন, লালমনিরহাটে ৬ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, নেত্রকোণায় ৪ জন, নীলফামারীতে ৬ জন, গাইবান্ধায় ১৩ জন, সিরাজগঞ্জে ৬জন, দিনাজপুরে ৩০ জন, জামালপুরে ১৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন, নওগাঁয় ৫ জন, বগুড়ায় ৪ জন, যশোরে ৩ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন, শেরপুরে ৩ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, কুমিল্লায় ২ জন, রংপুরে ৩ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন ও জয়পুরহাটে ২ জন মিলিয়ে মোট ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে দুই সপ্তাহে।
>> বানের পানিতে ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৬ লাখ ৫৮৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
>> দুর্গত জেলাগুলোতে অন্তত ৬২ হাজার ২০৮টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৩২ জেলার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ, ২০ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এর আগে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যের মধ্যে গরমিলের কারণে সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ও অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একরকম তথ্য সরবরাহের নির্দেশনা আসে।
অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্মসচিব মো. আবু তালেব বুধবার বলেন, “তথ্য সরবাহের সঠিকতা নিয়ে মন্ত্রণালয় খুব অসন্তুষ্ট। কয়েকদিন ধরে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্যের ভিন্নতা ছিল। এজন্যে সব কিছু যাচাই করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর মঙ্গলবার থেকে একই তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।”
“মঙ্গলবার সচিবের নির্দেশনা এসেছে, কোনোভাবেই জেলা প্রশাসক ও ত্রাণ কর্মকর্তার বাইরে অন্য সূত্রের তথ্য নেওয়া যাবে না। কিছুদিন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও আজ থেকে একই রকম তথ্য সরাবরাহ করা হচ্ছে।”
ইতোমধ্যে উত্তরের দুর্গত এলাকাগুলোর বানের পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আর খুব বেশি বাড়বে না বলেই মনে করছেন উপ সচিব।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।
পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি শুরু হয়েছে।