পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় ‘তিন ডজন দেশের দুই হাজারের বেশি’ প্রতিনিধিকে নিয়ে ইউনূস সেন্টারের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে।
Published : 27 Jul 2017, 06:43 PM
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনূস সেন্টারের এক বিবৃতিতে সম্মেলন বাতিলের কথা জানানো হয়। তার দুই ঘণ্টা আগে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ওই সম্মেলনের অনুমতি না দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান।
শুক্রবার সকালে সাভারের জিরাবোতে নবনির্মিত সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনের এই বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করার কথা ছিল নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) সমন্বয়ক টমাস গাসের এ সম্মেলনে আসার কথা ছিল মূল বক্তা হিসেবে।
ইউনূস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ৪০টি দেশের দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধির এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। আমন্ত্রিত পাঁচশ বিদেশি অতিথির মধ্যে প্রায় দুইশ জন ঢাকায় পৌঁছেও গেছেন।
তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বলা হয়, “অনিবার্য কারণে সামাজিক ব্যবসা দিবস উপলক্ষে জুলাই ২৮-২৯, ২০১৭ তারিখের সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন আমরা বাতিল ঘোষণা করছি।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনা, বিতর্ক, ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এ সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে ইউনূস সেন্টার।
সাধারণত এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ২৮ জুন; ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ করা ইউনূসের জন্মদিনে। তবে রোজার কারণে ২০১৫ সালের মত এবারও সম্মেলনের তারিখে হেরফের হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং যারা নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের ‘সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বাতিল করার’ অনুরোধ জানানো হয় ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে।
ইউনূস সেন্টার সম্মেলন বাতিলের কোনো কারণ না দেখালেও পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বৃহস্পতিবার বিকালে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সম্মেলনের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানান।
ইউনূস সেন্টারের একজন মুখপাত্র জানান, সম্মেলনের বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত ২০ জুলাই চিঠি পাঠান তারা। ওই চিঠি ২০ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পৌঁছায়।
সাভারের যে এলাকায় সম্মেলন হওয়ার কথা, সেখানে কয়েকদিন আগেও ‘সন্ত্রাসী’ ধরা পড়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, যেহেতু সেখানে অনেক দেশের প্রতিনিধিদের আসার কথা, সেহেতু সব দিক মাথায় রেখেই পুলিশকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
“ড. ইউনূস সাহেবের অফিস থেকে, ইউনূস সেন্টার থেকে সম্ভবত ২৩ জুলাই আমরা জানতে পেরেছি, ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক ব্যবসা দিবস ২০১৭’ নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এখানে ৩৬টি দেশ এবং সংস্থা থাকবে। তার মধ্যে একজন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, আজারবাইজানের রাজার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। হঠাৎ করে তারা এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে, সে কথা জানানো হয়েছে ঢাকার এসপিকে।
“এই ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টের নিরাপত্তা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে, যার জন্য প্রস্তুতির দরকার। এ ধরনের সম্মেলন যখন হয়, আয়োজক সংস্থা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। এবং আয়োজক সংস্থার চাহিদা পূরণ করে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের অন্ধকারে রেখে অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে জানিয়ে বলবেন নিরাপত্তা দেন- এটা কিন্তু হয় না।”
বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও হেরে যান তিনি।
এরপর থেকে সরকারের সঙ্গে ইউনূসের টানাপড়েনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বহুবার শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন, সরকার, এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও চাপ এসেছিল ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে।
ইউনূসের জন্যই ‘সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের লবিংয়ে’ বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বলে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ।
বাংলাদেশে ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে হিলারি ক্লিনটন তার মন্ত্রী পদের প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সিনেট কমিটি সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি তদন্তও শুরু করেছে।
ইউনূসের সম্মেলন ‘সরকার বন্ধ করে দিয়েছে’- এমন অভিযোগ সত্য নয় মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, “সরকার বন্ধ করে নাই। আমাদের নিরাপত্তা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া তাদের উচিৎ ছিল।”
বিষয়টি নিয়ে ‘অপপ্রচার’ হচ্ছে মন্তব্য করে শহীদুল হক বলেন, “তাদের উদ্যোগ তারা সঠিকভাবে নেয়নি, আয়োজন ঠিক মত করেনি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, তাদের ল্যাকিং আছে। একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এরকম ল্যাকিং থাকা উচিৎ না।”
তিনি বলেন, সরকার চায় বাংলাদেশে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক সম্মেলন হোক। পুলিশ বিভাগও এ ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানায়। কিন্তু ইউনূস সেন্টার অনুমতি চেয়েছিল ঢাকার এসপির কাছে। এ আয়োজনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দপ্তরও জানত না।
“এসপি তো একা এত বড় আয়োজনের নিরাপত্তা দিতে পারবে না।... বিদেশি লোক আসবে, আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, এটা হয় নাকি? এই যে পানি সম্মেলন হচ্ছে, তার এক মাস আগে থেকে আমরা প্রস্তুত। সেটা নিয়ে তো অনেক মিটিং করা হয়েছে।”
এরপর সময় নিয়ে অনুমতি চাইলে পুলিশ দেবে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, “অবশ্যই অনুমতি দেওয়া হবে। সরকার তো সব সময়ই দেয়।”